যুযুধান: অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার নেতাজিনগর থানার বাইরে অটোচালকদের ভিড় বলেছিল, ‘মহিলাকে চিনে নাও, বাইরে বেরোলে ছিঁড়ে খাব’। শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলের সামনে অভিভাবকদের ভিড় বলল, ‘‘ওকে আমাদের হাতে তুলে দিক। চাবকে মেরে ফেলব।’’
বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলের অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক অভিভাবক দ্বিতীয় শ্রেণির একটি মেয়েকে যৌন হেনস্থার ঘটনাটি জানান। ওই স্কুলের নাচের শিক্ষক যে এই ঘটনায় অভিযুক্ত সেটাও বলা হয়। তার পরেই ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই অভিভাবকদের তৈরি থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার বেলা ১১টায় শুরু হয় বিক্ষোভ। দল বেঁধে স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়েন অভিভাবকেরা। অভিযুক্ত শিক্ষককে হাতে তুলে দেওয়ার দাবির পাশাপাশি তাঁর নামে অশালীন বিশেষণ উড়ে আসে ভিড় থেকে। শাস্তি আরও নৃশংস করার দাবি জানান কেউ কেউ। এক মহিলা যেমন বললেন, ‘‘ওকে বাঘের মুখে ছেড়ে দেওয়া উচিত। হাত-পা ছিঁড়ে চোখ উপড়ে নেবে।’’
এখানেই শেষ নয়, পুলিশ পাহারায় অভিযুক্ত শিক্ষককে যখন স্কুল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। রেহাই পায়নি পুলিশও। আহত হন টালিগঞ্জ থানার ওসি অনুপ ঘোষ-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী। আক্রমণকারীদের মধ্যে বহিরাগতরাও ছিলেন বলে অভিযোগ। কোনও রকমে ওই শিক্ষককে স্কুলের বাইরে বের করা হয়।
তোড়জোড়
বৃহস্পতিবার
• রাত ১০টা: অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শুক্রবার সকাল ১১টায় বিক্ষোভের ডাক তাণ্ডব
শুক্রবার
• সকাল ৯টা: সংবাদমাধ্যমের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিক্ষোভের খবর করার আবেদন
• বেলা ১১টা: স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের জমায়েত শুরু
• বেলা ১১.৩০: স্কুলে ঢুকে গোলমাল শুরু অভিভাবকদের। ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী
• বেলা ১২.৪৫: স্কুল থেকে বের করার সময় অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
• বেলা ১টা: পুলিশের সঙ্গে অভিভাবকদের ধস্তাধস্তি, আহত কয়েক জন পুলিশকর্মী
• বিকেল ৪টে: অভিযুক্তকে গ্রেফতারির ঘোষণা পুলিশের
এক অভিভাবক বলেন, ‘‘পুলিশকে সরে যেতে বলা হয়েছিল, অভিযুক্তকে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা বুঝে নেব। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তকে বাঁচাতে চায়। তাই পুলিশকেও ছাড়িনি।’’ এর পরেই হাতের জামা গুটিয়ে ভিড়ের ভিতরে ঢুকে গেলেন তিনি। কিছু ক্ষণ পরে মুখোমুখি দেখা হতেই আবেদন করলেন, ‘‘আমার নাম লিখবেন না প্লিজ। মেয়ে এই স্কুলে পড়ে তো!’’