হুগলি নদীতে চলা লঞ্চগুলির যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে এ বার তৎপর হল রাজ্য। সম্প্রতি বিভিন্ন লঞ্চ পরিবহণ সংস্থাগুলিকে নোটিস পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, যাত্রিবাহী লঞ্চ চালাতে গেলে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের (আইডব্লিউটি) নিয়ম মেনে চলতে হবে। লঞ্চে রাখতে হবে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা-সহ সারেঙ্গ, চালকের যোগ্যতামানের সরকারি শংসাপত্র ও লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট। ফেরিঘাটের উন্নতিরও বিধান দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে জলপথ পরিবহণের উন্নতিতে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি)। সেই অনুযায়ী ৫০টি ফেরিঘাটকে এক ছাতার তলায় আনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, আধুনিক রূপ দেওয়া হবে সেগুলিকে। ফেরিঘাটে থাকবে যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে শৌচাগার, পানীয় জল থেকে বিনোদনের ব্যবস্থা। এ জন্য রাজ্য ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে।
এমনিতেই জলপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে চলা লঞ্চঘাট ও লঞ্চগুলির দুরবস্থা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কলকাতা ও হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাটগুলির অবস্থা যে অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা মানছেন পরিবহণ কর্তারাই। কোনও জেটির লোহার পাতে মরচে ধরা, কোথাও জেটিতে বাঁধা শিকল ও নোঙর জেটির ওজনের তুলনায় কম। ফলে জোয়ারের ধাক্কায় বা বড় জাহাজের ঢেউয়ে নোঙর সরে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। বড় লঞ্চ ভিড়লেই জেটি হেলে যায়। সব থেকে বেহাল অবস্থা নাজিরগঞ্জ, শোভাবাজার, বাগবাজার ও হাওড়া জেটির।
জলপথ পরিবহণ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অফিসার বলেন, ‘‘কয়েকটি জেটি অবিলম্বে না পাল্টালে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েক দশক ধরে লঞ্চ বা জেটিগুলির দেখভালের অভাবে এই হাল। আইডব্লিউটি অনুয়ায়ী জলপথ পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত সংস্থাগুলিকে নোটিস দিয়েছি।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, নোটিসে বলা হয়েছে, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি-সহ রাজ্য পরিচালিত জলপথের সংস্থাগুলির কর্মীদের পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে। সরকারি সংস্থার দেওয়া যোগ্যতার শংসাপত্র থাকতে হবে সারেঙ্গ, চালকের। প্রতি বছর লঞ্চগুলির যে সমীক্ষা ও ফিটনেস দেখা হয়, থাকতে হবে সেই শংসাপত্রও। এগুলি না থাকলে লঞ্চ চালাতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও লঞ্চঘাটে বসবে হাইমাস্ট আলো, ডিসপ্লে বোর্ড ইত্যাদি। হুগলি নদী জলপথ সংস্থার চেয়ারম্যান অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘এ সব চালু করতে অনেক টাকা প্রয়োজন। আমাদের সেই টাকা নেই। তাই রাজ্য সাহায্য করলে আমরা প্রস্তুত।’’