প্রতীকী ছবি।
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলে নিত্য যানজট কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার। এ কাজে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও সমন্বয়ের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে সরকারি স্তরে।
কয়েক সপ্তাহ আগে ওই এলাকার যানজট সমস্যা মেটাতে পূর্ত দফতরের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে। ওই বৈঠকে দ্রুত সমস্যা
মেটানোর রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরে সম্প্রতি রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে প্রাথমিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা স্থির হয়েছে বলে খবর। পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই কাজ শেষ হলে পুরো যশোর রোডের যানজট সমস্যা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলের পরিধি বাড়ানো হবে। বিমানবন্দর এবং বারাসতের দিক থেকে আসা দু’টি রাস্তা মিলেছে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে। অপর রাস্তাটি চলে যাচ্ছে দক্ষিণেশ্বরের দিকে। ওই সংযোগস্থলে যানজট হলে যশোর রোড, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিমানবন্দরমুখী রাস্তার উপরে সরাসরি তার প্রভাব পড়ে। জানা গিয়েছে, ওই সংযোগস্থলের রাস্তা দু’দিকে যতটা সম্ভব চওড়া করা হবে। সম্ভব হলে দু’পাশে দুই অথবা আড়াই মিটার পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ করা হতে পারে। পাশাপাশি, বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের রাস্তাও প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ত দফতরের। সেই কাজে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইবে রাজ্য। অনুমতি পাওয়া গেলে রাস্তা চওড়া করে যশোর রোডে ওঠার পথ আরও খানিকটা সুগম করা হবে।
আরও পড়ুন: ‘দাদা, জেলের মধ্যে সব সেটিং আছে’
প্রাথমিক এই পরিকল্পনার অধীনে যশোর রোডের শরৎ কলোনি থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল পর্যন্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উড়ালপুলের সংস্কারের কাজও শুরু হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ওই উড়ালপুলের গঠনগত কিছু সংস্কার করা না হলে তা দিয়ে ভারী বা পণ্যবাহী গাড়ি চালানো এখন সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেও ওই এলাকার যানজট কমানো যাচ্ছে না।
কিন্তু পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, এই ব্যবস্থা বড়জোর পাঁচ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে নতুন পরিকল্পনা ভাবতে হবে প্রশাসনকে। সেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীনে নতুন একটি উড়ালপুল তৈরির কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পূর্ত দফতরের তরফে ওই উড়ালপুলের সম্ভাব্য জায়গা, কী ভাবে সেটি তৈরি হবে অথবা কোন এলাকা থেকে কতটা পর্যন্ত উড়ালপুলটিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তা স্থির করতে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। সংস্থার রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
কিন্তু এর মধ্যে একটি জটিলতা রয়েছে প্রশাসনের সামনে। গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোপথের নকশা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা মুশকিল। পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রাথমিক পর্বে হলদিরামের কাছে মেট্রোপথ নামানোর পরিকল্পনা ছিল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু হলদিরামের কাছে একটি উড়ালপুল থাকায় সেই নকশায় আপত্তি তোলে রাজ্য। তার পরে বিকল্প প্রস্তাব ছিল, ভিআইপি রোডের আগেই মেট্রোপথকে মাটির নীচে নামিয়ে তা বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তাতেও সমস্যা রয়েছে। কারণ, তা করতে হলে ভিআইপি রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বন্ধ রাখতে হবে। এর মধ্যে রাজ্যের পক্ষে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। এই কারণে স্থির হয়েছে, মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞেরা। দু’পক্ষের মত বিনিময়ের পরে সমন্বয়ের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।