‘জ্বলন্ত’ উদাহরণ দেখেও উদাসীন বাকিরা

শহরের প্রায় প্রতিটি বাজারই একটা করে গোরাবাজার। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পরিকাঠামোও তথৈবচ। দমকলের গাড়ি ঢোকার মতো রাস্তাও নেই। প্রশাসনও এ ব্যাপারে উদাসীন। ব্যবসায়ীরাও পুরসভাগুলিকে ভাড়া গুনেই খালাস। কার্যত আগুনের উপর বসে রয়েছে কলকাতার বাজারগুলি। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। কার্যত আগুনের উপর বসে রয়েছে কলকাতার বাজারগুলি। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share:

বিপদ: পার্ক সার্কাস বাজারে এ ভাবেই খোলা পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার।

ল্যান্সডাউন বাজার

Advertisement

টালির ছাউনির অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মাথার উপরে ত্রিপলের ছাউনি বেঁধেছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের তার চার দিকে এমন ভাবে ঝুলছে, তাকে জতুগৃহ বললেও কম বলা হয়। কলকাতা পুরসভার অধীনে গত ২১ বছর ধরে ল্যান্সডাউন বাজারের হাল এমনই। ১৯৯৬ সালে বাম আমলে বাজারের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু বাজার রয়েছে সেই তিমিরেই। বাজার সমিতির সম্পাদক অনিলকুমার সরকারের অভিযোগ, ‘‘বাজারে ৫৫০টি দোকান রয়েছে। যা হাল তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুরসভাকে বারবার বলেও লাভ হয়নি।’’

Advertisement

পার্ক সার্কাস বাজার

সর্বত্র প্লাস্টিকের ছাউনিতে ভর্তি। বিদ্যুতের তার ঝুলছে বিপজ্জনক ভাবে। কোনও কোনও দোকানে বিল্ডিংয়ের চাঙড় খসে পড়েছে। বাঁশ-প্লাস্টিকের ছাউনিও ভেঙে পড়ার উপক্রম। প্রায় সাত বিঘা জায়গা জুড়ে পার্ক সার্কাস বাজারের অবস্থা এমনই। পার্ক সার্কাস বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক গিরীন্দ্রচন্দ্র পালের অভিযোগ, ‘‘বর্তমান পুর বোর্ড বাজার সংস্কারের সামান্য কিছু কাজ করেছে। বাজারে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রও হাতেগোনা। কোনও জলাধার নেই।’’

যদুবাবুর বাজার

সপ্তাহ দুয়েক আগে চাঙড় ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। টিনের ছাউনির অনেক জায়গা ফুটো হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল পড়ে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। প্রায় তিন বিঘা এলাকা জুড়ে থাকা দক্ষিণ কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন এই বেসরকারি বাজারে রয়েছে ৬৫০টি দোকান। যদুবাবুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ভানু দেববিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘বাজার সংস্কারের জন্য সব ব্যবসায়ী, মালিক পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে আগামী দিনে বড়সড় বিপদের সম্ভাবনা।’’ বাজারের মালিকানার এক শরিক দেবপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আর্থিক অনটনের কারণে পুরো বাজার সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না।’’

নাগেরবাজারে খোলা মিটার বক্স।

নাগেরবাজার

সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০ দোকান রয়েছে দমদম নাগেরবাজারে। কিন্তু অবস্থা সেই গোরাবাজারের মতোই। সরু গলিপথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দোকানের সারি, গুদামঘর। যত্রতত্র বিদ্যুতের তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অধিকাংশই অস্থায়ী দোকান। বাজারের মধ্যেই গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন। জতুগৃহ বললে কম কিছু বলা হবে না। আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার কোনও জায়গা নেই। ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানালেন, বাজারে আগুন লাগলে তাঁরাও যে রাস্তায় বসবেন জানেন। কিন্তু তাঁদের হাতে কিছু নেই। দক্ষিণ দমদম পুরসভাই এই বাজারের মালিক।
এই বাজারেরও অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স নেই।

দমদম অমৃতবাজার

এই বাজারে তবু কিছু অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে। কিন্তু পরিকাঠামো সেই একই রকম। টিনের ছাউনির তলায় প্রায় শ’দেড়েক দোকান। বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কাছাকাছি কোনও জলের ব্যবস্থা নেই। কলকাতা পুরসভার অধীনে রয়েছে এই অমৃতবাজার। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মদন দাস জানালেন, তাদের সমিতির সামান্য আয়। সেই টাকাতেই যতখানি বাজার সুরক্ষিত রাখা যায় তাঁরা করছেন। কিন্তু এই বাজারের ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। আগুন প্রতিরোধ করার মতো তাঁদের বাজারে কোনও রক্ষাকবচ নেই বলেই তাঁরা বলছেন।

তথ্য সংগ্রহ: পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেহবুব কাদের চৌধুরী

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement