Death

Death: বাড়ির সামনে এসে বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় মৃত কলেজছাত্রী

এ দিন এলাকায় পারমিতার দেহ পৌঁছতেই বাসিন্দারা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয়দের দাবি, রাতে গতির প্রতিযোগিতায় নেমেছিল দু’টি মোটরবাইক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২২ ০৬:১৯
Share:

পারমিতা সাঁপুই

সাইকেলে চেপে কাজ থেকে ফেরার পথে বেপরোয়া মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হল বছর একুশের তরুণীর। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে, নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার নতুনদিয়ারায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পারমিতা সাঁপুই। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা। গুরুতর জখম হয়েছেন মোটরবাইকের চালকও। সুদীপ্ত পাল নামে উনিশ বছরের ওই তরুণকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুরের বাসিন্দা ওই তরুণের খুলি এবং থুতনি ভেঙেছে। শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত রয়েছে তাঁর।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পারমিতার বাবা অধিকাংশ সময়েই শয্যাশায়ী থাকেন। মাঝেমধ্যে বাড়ির সামনে একটি পানের দোকানে বসেন। বিবাহিত দিদিও অসুস্থ। বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করেন মা গীতা সাঁপুই। তাঁর আয়েই মূলত সংসার চলে। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন স্নাতকের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া। কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতে ভরসা ছিল সাইকেল। পারমিতার জেঠতুতো দাদা বাবুসোনা সাঁপুই জানান, কলা বিভাগে স্নাতকের প্রথম বর্ষে পড়ার খরচ চালানোর জন্য ঢাকুরিয়ার একটি নার্সিংহোমের ল্যাবরেটরিতে কাজে যোগ দেন তরুণী। সেই আয়েই পড়াশোনা ও সংসারে মাকে সাহায্য করতেন।

পরিজনেরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন সকালে সাইকেল নিয়ে গড়িয়া স্টেশনে যেতেন পারমিতা। সেখান থেকে ট্রেনে ঢাকুরিয়া। রাতে ফের স্টেশন থেকে সাইকেলে বাড়ি ফিরতেন। পারমিতার প্রতিবেশী ও আত্মীয় রামনারায়ণ সাঁপুই জানান, শুক্রবার রাতেও সে ভাবেই ফিরছিলেন তরুণী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেই সময়ে রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল দু’টি মোটরবাইক। বাড়ির কাছে বড় রাস্তা থেকে নিচু রাস্তায় নামার আগেই একটি মোটরবাইক ধাক্কা মারে পারমিতার সাইকেলে। সাইকেল নিয়ে কয়েক ফুট দূরে রাস্তার ধারের ইটের স্তূপে গিয়ে পড়েন তরুণী। পারমিতাকে ধাক্কা মারা বাইকচালকও ছিটকে পড়েন। দু’জনকেই দু’টি অটোয় তুলে স্থানীয়েরা ইএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা পারমিতাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

সুদীপ্ত পাল নামে ওই মোটরবাইক চালককে প্রথমে ওই বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বাড়ির লোকজন তাঁকে সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সুদীপ্তকে কালীঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইএম বাইপাসের ধারের হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই যুবকের থুতনি এবং খুলি ভেঙেছে। শরীরের একাধিক জায়গায় চোট রয়েছে। সুদীপ্তের পরিবারের তরফে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পঞ্চসায়র থানা থেকে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে নরেন্দ্রপুর থানা। বাইকচালক তরুণের শারীরিক অবস্থা দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওই থানা জানিয়েছে।

এ দিন এলাকায় পারমিতার দেহ পৌঁছতেই বাসিন্দারা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয়দের দাবি, রাতে গতির প্রতিযোগিতায় নেমেছিল দু’টি মোটরবাইক। তারই একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যটি পালিয়েছিল। তরুণীর এক আত্মীয় বললেন, ‘‘সাইকেল নিয়ে একদম বাড়ির কাছেই চলে এসেছিল। কয়েক সেকেন্ড পরে মোটরবাইকটা এলে আজ বেঁচে থাকত মেয়েটা।’’

মেয়েকে হারিয়ে স্বভাবতই শোকস্তব্ধ পারমিতার বাড়ি। বাবা প্রতাপ এক পাশে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে বসে। কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই কেউ। অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা গীতাদেবী। তখন ঘরে শুধুই মায়ের বিলাপ, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জেদ করে কে ঝগড়া করবে? আর কে বলবে, সংসারের কিছুটা টাকাআমিও দেব!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement