বানের ধাক্কায় নদীর পাড় ভাঙছে। তার জেরে ভাঙনের আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় মন্দির থেকে সরকারি আবাসন এমনকি প্রাথমিক স্কুলেও। এ ছবি বরাহনগরের আলমবাজার এলাকার গঙ্গার পাড়ের।
বাসিন্দাদের দাবি, কোথাও তিন মিটার, কোথাও আবার পাঁচ মিটার পর্যন্ত এসে ঠেকেছে ভাঙন। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
যদিও সেচকর্তাদের দাবি, প্রায় কোটি টাকা খরচ করে আলমবাজারের কিছুটা অংশে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে। ভাঙন কবলিত এলাকার মধ্যে কিছু জমি ব্যক্তিগত মালিকানার হওয়ায় কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। কারণ ‘নো-অবজেকশন’ শংসাপত্র না পেলে ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে কাজ করার সমস্যা রয়েছে।
নিবেদিতা সেতুর পর থেকেই গঙ্গার পাড় ঘেঁষে শুরু আলমবাজার এলাকা। কথিত আছে, চৈতন্যদেব পুরী যাওয়ার সময়ে ওই গঙ্গার পাড় ধরে গিয়েছিলেন। এলাকার শুরুতেই রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পাস। সেখান থেকে শুরু করে রামলোচন ঘোষ ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৬০ মিটার এলাকার মধ্যে ২৬০ মিটার অংশের পাড় ভেঙে গঙ্গায় তলিয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা।
নদীর পাড় ঘেঁষা সরকারি আবাসনের ভিতরে ক্ষুদিরাম প্রাথমিক বিদ্যাপীঠ স্কুল। প্রধান শিক্ষিকা রুম্পা করঘোষ বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য কয়েক বছর আগে সীমানা পাঁচিল তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভাঙন এখন একেবারে পাঁচিলের সামনে চলে এসেছে। বান এলে ভয় হয় যে পাঁচিল না ভেঙে পড়ে।’’ ভাঙন ক্রমশ আবাসনের কাছে চলে আসায় আতঙ্কিত বাসিন্দারাও।
ওই সরকারি আবাসনের পরেই থাকা গঙ্গার ঘাটটি ভাঙনের ধাক্কায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ওই ঘাট সংলগ্ন ব্যক্তিগত মালিকানার মন্দিরের ঝুলন্ত বারান্দার বেশ খানিকটা অংশ মাস ছয়েক আগে বানের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। বাকি অংশে বড়সড় ফাটল ধরেছে বলে জানান সেখানকার দায়িত্বে থাকা সঞ্জিতকুমার ঢোল। বরাহনগর পুরসভার স্থানীয় ৪নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রামলোচন ঘোষ ঘাটে গর্তে পড়ে প্রতি বছরই ১০-১২ জনের মৃত্যু হত। ২০১১ সালে স্থানীয় বিধায়ক তাপস রায় সেচ দফতরকে দিয়ে সেখানে কাজ করিয়েছিলেন। বাকি অংশের ভাঙন রোধের জন্য সাংসদ সৌগত রায়ের মাধ্যমে তৎকালীন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল। তবে জায়গাটি পরিদর্শন ছাড়া আর কিছুই হয়নি।’’ তাপসবাবু বলেন, ‘‘সেচমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। যাতে তাড়াতাড়ি কাজটি শুরু করা হয় তার জন্য আবার কথা বলব।’’
সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বিএসএফ ক্যাম্পের আগে পর্যন্ত অংশ ভেঙে অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকার নিয়েছে। কংক্রিটের নির্মাণ, গাছপালা— সবই জলের তলায়।
সেচ দফতর জানায়, ৩৬০ মিটারের মধ্যে ১০০ মিটার অংশে ভাঙন রোধের কাজ সীমান্তরক্ষী বাহিনী করেছে। বাকি অংশের মধ্যে ১৩০ মিটার জায়গায় শালখুঁটি দিয়ে সমান্তরাল একটি সীমানা পাঁচিল বানিয়ে, তার উপরে কংক্রিটের ঢাল তৈরি করে ভাঙন আটকানো হবে। বাকি ১৩০ মিটার অংশের কাজের জন্য নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এ ছাড়াও বরাহনগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতন্য ঘাটে
প্রায় ৭০ মিটার অংশ নদী গর্ভে তলিয়েছে। ভাঙন রোধের কাজ হবে কাচ মন্দির এলাকাতেও।