প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্ককে একটি আলোচনাচক্রে গবেষণাপত্র পেশ করার জন্য আয়োজক সংস্থাকে ৪০০ ডলার দিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিজ্ঞানী। সোল থেকে ৫০০ ডলার খরচ করে ব্যাঙ্ককেও গিয়েছিলেন তিনি। আরও ৪০০ ডলার খরচ করে তিনি সেখানে হোটেলে ওঠেন। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখেন, পুরোটাই ভাঁওতা!
লালবাজারের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভাবেই চুল জো নামে দক্ষিণ কোরিয়ার ওই বিজ্ঞানীকে ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই সংস্থার সদর দফতর সল্টলেকের লাবণি এস্টেটে। প্রতারিত হওয়ার পরে কোরিয়ার ইনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রশক্তি এবং পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের ওই বিজ্ঞানী সে দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামীর কাছে অভিযোগ জানান। ভারতীয় দূতাবাস থেকে সেই অভিযোগ ই-মেল মারফত পাঠানো হয়েছে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের কাছে। সিপি-র নির্দেশে সাইবার থানা মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারির খবর নেই।
লালবাজার সূত্রের দাবি, সিপি-র কাছ থেকে ই-মেল পেয়ে সাইবার থানার সাব-ইনস্পেক্টর ইন্দ্রনীল ঘোষ প্রাথমিক তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই ওই সংস্থার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী মামলা রুজু হয়েছে। অভিযু্ক্তদের খোঁজে তল্লাশিও চলছে। তদন্তকারীরা জানান, শুধু ওই দক্ষিণ কোরীয় বিজ্ঞানী নন, এমন আরও অনেকেই এই চক্রের শিকার হয়েছে। ওয়েবসাইটটি ভুয়ো বলেও দাবি করেছে পুলিশ। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তার বক্তব্য, ‘‘এই চক্রের পর্দা ফাঁস করতেই হবে। কারণ, এর সঙ্গে আমাদের দেশের মানসম্মানও জড়িত রয়েছে।’’
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই সংস্থা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে আলোচনাচক্র আয়োজন করার বিজ্ঞাপন দেয় এবং সেখানে গবেষণাপত্র পেশের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়। সেই সূত্রেই দক্ষিণ কোরীয় বিজ্ঞানী ওই সংস্থাকে টাকা দিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ওই সংস্থার ওয়েবসাইটটি চালু ছিল। তাতে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, জাপানের ইয়োকোহামা, ইন্দোনেশিয়ার বালি, এমনকী কাল, শুক্রবার ব্যাঙ্ককেও আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের আয়োজন করার ঘোষণা রয়েছে।
দক্ষিণ কোরীয় বিজ্ঞানী যে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর ব্যাঙ্ককে পরিবেশ বিজ্ঞানের উপরে ২৮৯তম সেমিনার হওয়ার কথা ছিল। এ বার ওই ওয়েবসাইট ঘোষণা করেছে, কাল, শুক্রবার থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানের ৩০২তম সেমিনার হওয়ার কথা।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, নেট দুনিয়ায় এ ভাবে অনেকেই প্রতারণার জাল বিছিয়ে রাখে। কিন্তু এই ওয়েবসাইট দেখে অনেকেরই সন্দেহ হওয়ার কথা। ওই প্রবীণ দক্ষিণ কোরীয় বিজ্ঞানী একটু খুঁটিয়ে দেখলে বিষয়টি বুঝতে পারতেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এমন কোনও ওয়েবসাইটে নিজের গবেষণাপত্র বা টাকা দেওয়ার আগে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
অনেক সময়ে এ ধরনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘ম্যালওয়্যার’ বা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে এই ফাঁদে পা দেওয়া অনেকের কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত তথ্য অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে।