—প্রতীকী চিত্র।
দুরারোগ্য অসুখ মানেই সব শেষ নয়। এমনটাই নিজের জীবন দিয়ে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। আবার, তাঁর মতোই মোটর নিউরোন ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হয়েও মানুষের জন্য কাজ করে গিয়েছেন বঙ্গের চিকিৎসক সুব্রত গোস্বামী। স্নায়ুর ওই বিরল রোগ নিয়েই এ বার গবেষণা শুরু করতে একত্রিত হয়েছে চার সংস্থা। রাজ্য জুড়ে চলবে ওই গবেষণা।
তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করবে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজি দফতর। শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্ট, এসএসকেএম হাসপাতাল, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়— এই চার প্রতিষ্ঠান যৌথ ভাবে ওই গবেষণা চালাবে।
সলতে পাকানোর কাজটা শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশে ব্যথার চিকিৎসার অন্যতম পুরোধা সুব্রত গোস্বামী মোটর নিউরোন ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হন ২০২০-তে। হঠাৎ হুইলচেয়ারে বন্দি হয়ে গেলেও মানুষের জন্য তাঁর ভাবনা থামেনি। তাঁর কাছেই ওই রোগ নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন পেন ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের আর এক প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, অস্থি চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং আরও কয়েক জন। রাজি ছিলেন সুব্রতও। কিন্তু তিন বছরের মধ্যে থেমে যায় তাঁর জীবন। ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই সুব্রতর স্মরণসভা থেকেই গবেষণার কথা ঘোষণা করেন তাঁর সতীর্থেরা।
খুব শীঘ্রই শুরু হবে সেই গবেষণা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪-৫ জন ওই রোগে আক্রান্ত। রাজ্যে অন্তত পাঁচ হাজার আক্রান্ত রয়েছেন। তাঁদের সকলকেই গবেষণার মধ্যে আনতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন শান্তিরঞ্জনেরা। পেন ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ওই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, মোটর নিউরোন ডিজ়িজ় আসলে জিনঘটিত রোগ। মিউটেশনের ফলে জিনের পরিবর্তন হয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়। রোগ ধরা পড়ার পরে মেরেকেটে বছর পাঁচেক আয়ু থাকে।
শান্তিরঞ্জন বলেন, ‘‘একটা ওষুধ দেওয়া হয় বটে, কিন্তু সেটা কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আমরা চাইছি রোগটির শিকড়ে পৌঁছতে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, মোটর নিউরোন ডিজ়িজ়ে জিনের বিশ্লেষণ (জিনোম সিকোয়েন্স) করে দেখা হবে জিনের কোন পয়েন্টে কী পরিবর্তন, কতটা ঘটছে, তার জন্য কী সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ওই সমস্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় দেখা হবে, কী ভাবে সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এর জন্য আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে আইআইসিবি-তে। সেখানে জিনোম সিকোয়েন্সের পরে রিপোর্ট পাঠানো হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জানা যাচ্ছে, এসএসকেএমের স্নায়ুরোগ বিভাগ থেকে কয়েকশো রোগী মিলেছে। সেখান থেকে আগামী দিনে আরও রোগী পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, রাজ্য জুড়ে রোগীর খোঁজ করবেন গবেষকেরা। পিজির স্নায়ুরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক বিমানকান্তি রায়-সহ আরও তিন জন চিকিৎসক এই গবেষণায় যুক্ত। শান্তিরঞ্জন বলেন, ‘‘ডিমেনশিয়া, পার্কিনসন্স এক ধরনের মোটর নিউরোন ডিজ়িজ়। তাই এই গবেষণা অনেককে আলোর দিশা দেখাবে, এই আশা রাখি।’’