কলকাতায় ৭৬ হাজার খাবার দোকান লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা চালাচ্ছে। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। পুরসভার হিসেবে, প্রতি বছর লাইসেন্স ফি হিসেবে ওই সব দোকান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আয় হতে পারত। কিন্তু তা তো হয়ইনি, বরং লাইসেন্স না নিয়েই দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে দোকানগুলি। খোদ পুরসভা সূত্রেই এ খবর মিলেছে। কিন্তু আর যাতে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা না চালাতে পারেন ওই ব্যবসায়ীরা, তাই এ বার কোমর বেঁধে নামছে পুর-প্রশাসন। খুব শীঘ্রই পুরসভার লাইসেন্স দফতর ডাক বিভাগের মারফত নোটিস ধরাবে ওই সব দোকানদারকে। এক মাসের মধ্যে লাইসেন্স দফতরে রেজিস্ট্রেশন না করালে সর্বাধিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন বিভাগীয় মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের খাবার দোকানগুলিতে পুরসভার ফুড অ্যাডাল্টারেশন অ্যাক্ট অনুসারে লাইসেন্স করানো বাধ্যতামূলক ছিল। প্রত্যেক দোকানদারকে প্রতি বছর একটা ফি দিয়ে লাইসেন্স করাতে হতো। আর সেই লাইসেন্স ছাড়া খাবার বিক্রি রীতিমতো অপরাধ বলেই গণ্য হতো। ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘দ্য ফুড সেফ্টি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ (এফএসএসএ) প্রণয়ন করে। যা লাগু হয় ২০১১ সালে। আর তাতেই কলকাতা পুরসভার নিজস্ব ফুড অ্যাডাল্টারেশন অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যায়। পুরসভা থেকে দোকানদারদের বলা হয়, পুরসভার ভেজাল রোধ আইনে যাঁদের দোকানের লাইসেন্স রয়েছে তাঁরা নতুন আইনে তা পরিবর্তন করিয়ে নিন। এ জন্য এক বছর সময়ও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন হতে অসুবিধা হবে, দেশ জুড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই দাবি ওঠায় লাইসেন্স করানোর সময় একাধিক বার বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্র। এই সময়ের মধ্যে কলকাতার নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মোট ৮৮ হাজার দোকানের মধ্যে লাইসেন্স দফতরে রেজিস্ট্রেশন করায় মাত্র ১২ হাজার দোকান। সর্বশেষ সময় ছিল এ
বছরের ৪ অগস্ট।
পুরসভার স্বাস্থ্য ও ভেজাল রোধ দফতরের মেয়র পারিষদ অতীনবাবু জানান, লাইসেন্স দফতরের কাছ থেকে হিসেব নিয়ে জানা গিয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার দোকান এখনও নতুন আইন অনুযায়ী লাইসেন্স করায়নি।
লাইসেন্স ফি কত? মেয়র পারিষদ জানান, বছরে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে যাঁদের বেচাকেনা তাঁদের বছরে ১০০ টাকা করে লাইসেন্স ফি দিতে হবে। তার চেয়ে বেশি টাকার ব্যবসা হলে বাড়বে ফি-এর পরিমাণও। সেই হিসেবে ৭৬ হাজার দোকানের জন্য কমপক্ষে ৭৬ লক্ষ টাকা তো পুরসভার আয় নিশ্চিত। তবে লাইসেন্স করানোর প্রবণতা কম থাকায় পুরসভার আয়ও কমছে।
কিন্তু এত দিন পুরসভা এ নিয়ে কঠোর ভূমিকা নেয়নি কেন? কেনই বা ফুড সেফ্টির লাইসেন্স ছাড়া খাবারের দোকান চলতে দেওয়া হয়েছে?
এ প্রসঙ্গে অতীনবাবুর জবাব, ২০১১ সালে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পরে ব্যবসায়ীদের পুরনো আইন থেকে নতুন আইনে লাইসেন্স বদল করার জন্য প্রায় পাঁচ বছর সময় দেওয়া হয়। ওই সময়ে কিছু করা যায়নি। এ বার সেই সময় উত্তীর্ণ। কয়েকদিনের মধ্যেই ওই দোকানদারদের নোটিস ধরানো হবে। তাতে বলা হবে, এক মাসের মধ্যে লাইসেন্স না করালে সংশ্লিষ্ট দোকানের বিরুদ্ধে জরিমানা চেয়ে পুর আদালতে (মিউনিসিপ্যাল কোর্ট) মামলা করা হবে। জরিমানার পরিমাণ কত? অতীনবাবু জানান, নতুন আইনেই বলা আছে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অনাদায়ে হাজতবাসও হতে পারে।
পুরসভার ভেজাল দফতরের এক আধিকারিক জানান, ফুড অ্যাক্টের প্রধান শর্তই হল আগে লাইসেন্স, পরে ব্যবসা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেহেতু একটি আইন থেকে অন্য একটি আইনে বদল হয়েছে, তাই সময় দিতে হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও যদি কেউ নতুন লাইসেন্স তৈরি না করেন, তা হলে পুর প্রশাসনের কঠোর না হওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। খুব শীঘ্রই নোটিস ধরানোর কাজ শুরু হবে বলে জানান ওই আধিকারিক।
এ দিকে, পুজোর মধ্যে পুরসভার ভেজাল বিরোধী টিম শহরের বেশ কয়েকটি পুজো প্যান্ডেল লাগোয় খাবার দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায়। অষ্টমীতে দক্ষিণ কলকাতার একটি চিনা রোস্তারাঁর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন। অভিযোগ জানানো হয় পুরসভায়। সোমবার অতীনবাবু জানান, অভিযোগ পেয়েই ওই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় পুরসভার ভেজাল দফতরের ইনস্পেক্টর। সেখানে কোনও আপত্তিকর রাসায়নিক না পেলেও রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের মান নিয়ে মালিককে সতর্ক করেন পুর আধিকারিকেরা। দফতরের এক আধিকারিক জানান, রান্নাঘরের হাল ফেরাতে ওই দোকানদারকে নোটিস ধরানো হয়েছে। পুজোর সময়ে চাউমিন, চাটমশলা, বিরিয়ানি-সহ একাধিক খাবারে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর রং এবং রাসায়নিক মেশানোয় বেশ কিছু দোকানের খাবার ফেলে দেন পুরসভার কর্মীরা। অনেককে নোটিস দিয়ে সতর্কও করা হয়েছে বলে জানান ওই আধিকারিক।