সমস্যা: হাত বাড়ালেই উড়ালপুল। বিপাকে সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দারা। ছবি: সুদীপ ঘোষ
বাড়ির তিনতলার বারান্দা ঘেঁষে উঠবে উড়ালপুল। প্রস্তুতি পর্বের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তাতে বিপাকে পড়েছেন সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের একটি বাড়ির বাসিন্দারা। উড়ালপুলের লোহার কাঠামো বর্তমানে বাড়ির বারান্দা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। উড়ালপুলটি তৈরি হলে বারান্দা থেকে তার ব্যবধান থাকবে মাত্র তিন ফুট! এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ৬, সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের একটি তিনতলা বাড়ির বাসিন্দারা।
বাসিন্দা বলতে শুধু মা ও দুই মেয়ের একটি পরিবার। পুরনো বাড়িটির একতলার ফ্ল্যাটটি বন্ধ। দোতলায় একটি অফিস চলে। ফলে সেখানে যাঁরা অফিস করতে আসেন, তাঁরা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে চলে যান। তাই সমস্যার মুখোমুখি শুধুমাত্র তিনতলার বাসিন্দা, অশীতিপর পুতুল দত্ত এবং তাঁর দুই মেয়ে বাসন্তী ও বাসবী। তাঁরাও প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায়। বাসবীদেবী ক্যানসার আক্রান্ত। তাঁরা ওই ফ্ল্যাটে ভা়ড়া থাকেন।
বাসবীদেবীর কথায়, ‘‘আমরা একা পড়ে গিয়েছি। একমাত্র আমাদের বাড়ির বারান্দা ঘেঁষে উড়ালপুল যাবে। তাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। পুলিশের কাছে অভিযোগও জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’’
মা উড়ালপুল থেকে একটি রাস্তা সরাসরি জুড়ে দেওয়া হবে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের সঙ্গে। মা উড়ালপুল ধরে সল্টলেকের দিক থেকে আসার সময়ে যাতে পার্ক সার্কাসে নামতে না হয়, তার জন্য সরাসরি এমনই এক বাহু যোগ হচ্ছে মা থেকে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলে। কেএমডিএ ওই কাজ করছে। ওই উড়ালপুলের একটু আগেই ৬ নম্বর সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের ওই বাড়িটি।
সম্প্রতি সেটির সামনে গিয়ে দেখা গেল, উড়ালপুল তৈরির জন্য লোহার যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা প্রায় ঠেকে গিয়েছে বারান্দায়। উড়ালপুলের স্তম্ভ তৈরির কাজের জন্য বাড়ির প্রধান ফটক আটকে গিয়েছে। ফলে বাড়ির সামনে রিকশা, ট্যাক্সি আসতে পারে না। কোথাও যেতে গেলে বেশ কিছুটা রাস্তা না হেঁটে উপায় নেই।
বাসন্তীদেবীর কথায়, ‘‘মা অসুস্থ। শরীর খুব খারাপ হলে বাড়ির দরজায় অ্যাম্বুল্যান্সও আসতে পারবে না।’’পুতুলদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিনতলার বারান্দা থেকে সহজেই নির্মীয়মাণ সেতুতে যাতায়াত করা যাচ্ছে। সেখানে কাজ করছেন কয়েক জন। তাঁদেরই এক জন অবশ্য জানান, লোহার পাত বারান্দার যতটা কাছে রয়েছে, উড়ালপুল অতটা কাছে থাকবে না। তবে ৩ ফুটের সামান্য বেশি দূরত্বে থাকবেই।
বাসবীদেবী জানান, দিন কয়েক আগে ওই নির্মীয়মাণ অংশে কয়েকটি লোহার পাতও চুরি গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দেখতেই তো পাচ্ছেন, কত সহজে উড়ালপুল থেকে আমাদের বাড়িতে ঢুকে আসা যায়। এখন বাড়ি থেকে একটু দূরে যে উড়ালপুল রয়েছে, সেখানে রাতের দিকে মত্ত যুবকের দল গাড়ি থেকে খালি মদের বোতল ছুঁড়ে ফেলে। এ বার আমাদের বাড়ির এত কাছে উড়ালপুল হলে সেখান থেকে মদের বোতল আমাদের বাড়িতে এসে পড়বে।’’
পরিবারটির আশঙ্কা, উড়ালপুল চালু হওয়ার পরে গাড়ি গেলে তার তীব্র কম্পনে ক্ষতি হতে পারে বাড়ির। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নকশা অনুযায়ী উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। যে বারান্দা উড়ালপুলের কাছে চলে এসেছে, সেটি পুরসভার আইন মেনে বানানো হয়েছিল কি না, তা পুরসভাই দেখবে। তবে কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, ওই বাড়িটি বহু বছরের পুরনো। সেটির নকশা বৈধ।