ফায়ার লাইসেন্স নেই পাঁচ হাসপাতালে

সরকারি হাসপাতালগুলিতে স্প্রিঙ্কলার, হাইড্র্যান্ট ও ফায়ার ডিটেক্টর লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সাত বছর পরেও অধিকাংশ কাজ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০২
Share:

বুধবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে আনা হল নতুন অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র। বৃহস্পতিবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে কেটে গিয়েছে সাত বছর। কিন্তু ৯৩ জনের মৃত্যুর পরেও যে কার্যত কোনও শিক্ষাই নেয়নি শহরের সরকারি হাসপাতালগুলি, তা উঠে এসেছে দমকলের পরিসংখ্যানেই। দমকল সূত্রের খবর, আমরি-কাণ্ডের পরে এসএসএসকেএম সহ শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অগ্নি-সুরক্ষায় এখনও দমকলের নিয়ম কার্যকরই করতে পারেনি! সেগুলি এখনও পায়নি ‘ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট’। ফলত, সেই শংসাপত্র না থাকায় ওই পাঁচ হাসপাতালের কোনও ফায়ার লাইসেন্সও নেই।

Advertisement

দমকল সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করেছিল কলকাতা পুলিশ, পুরসভা, দমকল, সিইএসসি-র কর্তাদের নিয়ে গঠিত ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি। কমিটির পরিদর্শনে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি অগ্নি-সুরক্ষায় গাফিলতির তালিকায় প্রথম দিকে নাম ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরও। একই সঙ্গে বাকি সরকারি হাসপাতালগুলিতে স্প্রিঙ্কলার, হাইড্র্যান্ট ও ফায়ার ডিটেক্টর লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সাত বছর পরেও অধিকাংশ কাজ হয়নি। দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘সে সময়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেসমেন্টের অবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্কও করা হয়েছিল। দিনের পর দিন কোনও রকম অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়়াই সেখানে মজুত রাখা হয়েছিল স্পিরিট ও অক্সিজেন সিলিন্ডার। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’

আমরিতে অগ্নিকাণ্ডের পরে ফায়ার সেফটি কমিটির তত্ত্বাবধানে শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা জোরদার করলেও সরকারি হাসপাতালগুলি সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। সেগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের উপরে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে ২০১৫ সালে পূর্ত দফতর শহরের পাঁচটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত তিন বছরে এসএসকেএম-সহ চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র হাইড্র্যান্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু স্প্রিঙ্কলার বা ডিটেক্টর বসানোর কাজ এখনও বাকি।

Advertisement

খালি পড়ে জল দেওয়ার পাইপ রাখার বাক্স। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শহরের নামী সরকারি হাসপাতালগুলি অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থায় এত পিছিয়ে কেন?

পূর্ত দফতরের এক কর্তার সাফাই, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৫টি, এসএসকেএমে ৪০টি, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১টি এবং আর জি করে ১৭টি বিল্ডিং রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে গড়া হাসপাতালের একাধিক বাড়িতে টেন্ডার প্রক্রিয়া করে স্প্রিঙ্কলার এবং ডিটেক্টর বসাতে সময় লাগছে।’’ ওই কর্তার দাবি, ‘‘কাজ দ্রুত চলছে। আশা করা যাচ্ছে, এক বছরের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।’’

এসএসকেএম-সহ শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি দমকলের যাবতীয় বিধি যে কার্যকর করতে পারেনি, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলে তৈরি সরকারি হাসপাতালগুলির বিল্ডিংয়ের নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্প্রিঙ্কলার এবং ডিটেক্টর বসানো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। পূর্ত দফতর দ্রুত কাজ করছে। যাবতীয় কাজ শেষ হলে শীঘ্রই দমকলের তরফে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।’’ পাশাপাশি প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘আগুন লাগতেই পারে। দমকলের একাধিক সুপারিশ কার্যকর করতে আমাদের সময় লাগবে। তা সত্ত্বেও আমরা বসে নেই। দমকলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে কলকাতা-সহ রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছি।’’

নিয়ম মতো, শহরের হাসপাতালগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব কর্মী থাকা আবশ্যক। অথচ বুধবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার সময়ে তাদের কোনও কর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডের সময়ে হাসপাতালের নিজস্ব কর্মীদের কেন দেখা যায়নি, সে বিষয়ে তদন্ত হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement