বাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত মালিক

এ দিন ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পরে দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাদ উড়ে গিয়ে বহু দূরে ছিটকে পড়ে। আগুনের শিখা পৌঁছে যায় প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০১:২৩
Share:

দগ্ধ: বারুইপুরের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে। শুক্রবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হল মালিকের। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বারুইপুর থানার হারাল এলাকার গায়েনপাড়ায়। মৃতের নাম অশোক মণ্ডল (৩৬)। তাঁর ভাই প্রদীপ মণ্ডল গুরুতর জখম অবস্থায় ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পরে দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাদ উড়ে গিয়ে বহু দূরে ছিটকে পড়ে। আগুনের শিখা পৌঁছে যায় প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে দমকল আসার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুর থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় কুড়ি বছর ধরে বাড়ির পাশে ওই কারখানা চালাচ্ছিলেন প্রদীপ ও অশোক। ওই কারখানায় মূলত আতসবাজি তৈরি হত। ভিতরে এক পাশে বারুদ ও প্রায় ১১টি ড্রামে রাসায়নিক মজুত করা ছিল। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকাল থেকেই দুই ভাই মশলার সঙ্গে রাসায়নিক মেশানোর কাজ করছিলেন। আচমকা রাসায়নিক মেশানো বারুদে আগুন ধরে যায়।’’ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের ফুলকি এসে বারুদের স্তূপে পড়ে।

Advertisement

কারখানার পাশেই প্রদীপ ও অশোকবাবুর বাড়ি। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চরকি, ফুলঝুরি-সহ নানা আতসবাজি মজুত করে রাখা। ওই বাজি কারখানার কোনও অনুমোদন রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে বারুইপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বেআইনি ভাবে বাজি মজুতের অভিযোগে প্রদীপবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

জেলার পুলিশকর্তারা জানান, ওই কারখানায় কোনও নিয়মই মানা হত না। অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থাও সম্ভবত ছিল না। এমনকী, মশলা ও অতিদাহ্য রাসায়নিক পাশাপাশি রাখা থাকত। কারখানায় ইলেকট্রিকের ওয়্যারিং-ও ঠিক ছিল না। স্থানীয় বাজি ব্যবসায়ী সমিতির তরফে শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘অসতর্ক হয়ে বাজি তৈরি হচ্ছিল। সেই কারণেই বিস্ফোরণ ঘটে।’’

প্রদীপ ও অশোকের এক বন্ধু জানান, সম্প্রতি আতসবাজির একটি বরাত মিলেছিল। দুই ভাই নিজেরাই বাজির মশলা তৈরি করছিলেন। বর্ষায় আতসবাজির মশলা শুকনোটা সমস্যা। অনেক সময়ে ইলেকট্রিক হিটারে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাজির মশলা শুকনো হয়। সেখানে তাপমাত্রা বেশি হয়ে গেলেই বিপত্তি। আচমকা মশলায় আগুন ধরে যায়। ওই আগুনই কারখানার মজুত মশলায় ছড়িয়ে যায়। এ দিন এমন কোনও ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে।

পুলিশ জানায়, কারখানার ভিতরেই অশোকবাবুর ঝলসানো দেহ মেলে। প্রদীপ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পরে উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফের বাজির কারখানাগুলিতে অভিযান হবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর একটি বেআইনি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছিল।’’ এ দিন ওই কারখানায় অশোক ও প্রদীপ ছাড়া আর কেউ ছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement