ধোঁয়ায় বন্দি হয়েই মৃত্যু

আগুনের আতঙ্কে বাকিদের মতোই নীচে নামার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু অন্ধকার ও ধোঁয়ায় দিশা হারিয়ে সিঁড়ির বদলে হোটেলের লন্ড্রির দিকে চলে যান। পড়ে যান আরও বেশি ধোঁয়ার মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৭
Share:

এই হোটেলেই লাগে আগুন।

আগুনের আতঙ্কে বাকিদের মতোই নীচে নামার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু অন্ধকার ও ধোঁয়ায় দিশা হারিয়ে সিঁড়ির বদলে হোটেলের লন্ড্রির দিকে চলে যান। পড়ে যান আরও বেশি ধোঁয়ার মধ্যে। বৃহস্পতিবার হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলের পাঁচতলার একটি ঘরের আবাসিক অনুপ অগ্রবালের মৃত্যুর পরে এমনই তথ্য উঠে আসছে সেখানকার কর্মীদের কথায়।

Advertisement

সেই তলার অন্য কয়েক জন আবাসিক সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এসেছেন। কেউ জানলা খুলে পাইপ বেয়েও নেমেছেন। অনুমান, অনুপও তেমন কিছুই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দিশা হারিয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত হোটেলের কিছু কর্মী তাঁকে উদ্ধার করে যখন নীচে নিয়ে আসেন, তখন আর চেতনা ছিল না তাঁর।
মনে করা হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট চরমে পৌঁছেছিল গুজরাতের বাসিন্দা কাপড় ব্যবসায়ী অনুপের। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।

পরিবার সূত্রে খবর, ব্যবসার কাজে মাঝেমাঝেই কলকাতায় আসতেন অনুপ। বড় মেয়ে দীপিকার বিয়ে হয়েছে এই শহরেই। জামাই অঙ্কিত অগ্রবাল ছুটে আসেন হাসপাতালে। বলেন, ‘‘রবিবার শ্বশুরমশাই এসেছিলেন। এখনও পর্যন্ত আমার স্ত্রীকে বা গুজরাতে শাশুড়িকে মৃত্যু সংবাদ জানাতে পারিনি।’’

Advertisement

একই ভাবে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন চমর কিষেণ। তিনি টাটা স্টিলের কর্মী। দমকলকর্মীরা জানান, হোটেল থেকে চমরকে বার করার সময়েই তাঁর দেহে সার ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালে চমরের এক সহকর্মীর কাছে তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন ওড়িশার সুন্দরগড়ের গোমন্ডি গ্রামের চমর কিষেণের ছেলে অজয়। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘মাকে সামলানো যাচ্ছে না!’’

আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি টাটা স্টিলের আরও তিন অফিসার। তাঁদেরই এক জন চাঁদনি চন্দ্রাণী। চিকিৎসকদের তিনি জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই দমবন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর। গলগল করে ঘামছিলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ঘরের ভিতরটা ভরে গিয়েছে গাঢ় ধোঁয়ায়। দূর থেকে শুধু কানে আসছিল কিছু মানুষের চিৎকার। কোনওমতে হাতড়ে-হাতড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করেন তিনি। কী ভাবে যে শেষ পর্যন্ত হোটেলের নীচে পৌঁছলেন, নিজেও বলতে পারছেন না। ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও উডল্যান্ডস হাসপাতালের আইসিইউ-তে শুয়ে চিকিৎসক সৌম্যব্রত রায়চৌধুরীকে সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আতঙ্কে শিউরে উঠেছিলেন চাঁদনি।

প্রায় একই অবস্থা ওড়িশার বাসিন্দা অজিত হোরো এবং আনন্দ মোহান্তির। অফিসের বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসে তাঁরাও উঠেছিলেন গোল্ডেন পার্ক হোটেলে। এ দিনের ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনও। আনন্দ মোহান্তিকে দমকলের সিঁড়িতে করে নীচে নামানো হয়। উডল্যান্ডসের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অজিত হোরোরও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল প্রবল শ্বাসকষ্টে। কোনওক্রমে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, চাঁদনিদেবী ও অজিতবাবুর বিপদও এখনও কাটেনি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দু’জনেই এত বেশি আতঙ্কিত এবং বিপর্যস্ত যে, ভাল ভাবে কথা বলতে পারছেন না।
তাঁদের কাউন্সেলিং শুরু হবে আজ, শুক্রবার থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement