গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্য তথা দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়ে এ বার ভিন্ন স্বর শোনা গেল চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গলায়। মোদী সরকারকে টার্গেট করে লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বক্তৃতা ও রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বিদায়ী রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর বিতর্কিত মন্তব্য, এই দুটি বিষয় নিয়েই ফেসবুকে নিজের মত প্রকাশ করেছেন কমলেশ্বর। তাতে দু’পক্ষকেই তীব্র শ্লেষে বিঁধেছেন তিনি।
‘জোলাপ আবশ্যক’ এই শিরোনামে কমলেশ্বর লিখেছেন, ‘দিন কয়েক আগে রাজ্য থেকে লোকসভায় নির্বাচিত মাননীয়া মহিলা সাংসদ সুললিত ইংরেজিতে কেন্দ্রের শাসকদলকে আক্রমণ করেছিলেন। সঠিক ছিল তাঁর তোলা প্রশ্নগুলো।’ নাম না করলেও কমলেশ্বর ইঙ্গিত করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের দিকেই। কিছুদিন আগে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ উল্লেখ করে সংসদে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তা দেশ জুড়ে তোলপা়ড়ও ফেলে দেয়।
এরপর বিদায়ী রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন ওই চিত্র পরিচালক। তিনি লিখেছেন, ‘রাজ্য ছাড়ার সময় মাননীয় বিদায়ী রাজ্যপাল সুঠাম গাম্ভীর্যে রাজ্যের শাসকদলকে বিদ্ধ করলেন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে। তাঁর তোলা প্রশ্নগুলোও সঠিক।’ দিন কয়েক আগেই কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের নীতিই এ রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’’ তাঁর এই মন্তব্য বিতর্কের ঝড় তোলে।
আরও পড়ুন: সংসদে ক্ষমা চাইলেন আজম খান, এখনও সন্তুষ্ট নন রমা দেবী
মহুয়া মৈত্র এবং কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, দু’জনের বক্তব্যকেই প্রাথমিক ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন কমলেশ্বর। কিন্তু, পোস্টের পরবর্তী ধাপে দু’জনকে নিশানা করে তিনি তির্যক ভঙ্গিতে লিখেছেন, ‘দু’জনেরই সমস্যা হলো - বোধহয় এঁদের চোখের সামনে কোনও আয়না নেই - কারণ দু’জনেই তাঁদের নিজেদের পছন্দের রাজনৈতিক দল - দলের নীতি প্রকরণ, ভাবাদর্শ ও কার্যকলাপ নিয়ে নিশ্চুপ। তাঁদের নিজেদের ভুল ত্রুটি, অন্যায় বা অসহিষ্ণু অবস্থান নিয়ে কোনও আত্মানুসন্ধান নেই। দক্ষিণপন্থী সংস্কৃতিতে এহেন পচা চোঁয়া ঢেঁকুর তোলার নাম ‘মার্কেটিং’। জোলাপ আবশ্যক।’
‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এখন ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার’ এই অভিযোগ তুলে গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠান দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাতে গণপিটুনি বন্ধে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ওই তালিকায় ছিলেন আদুর গোপালকৃষ্ণন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শ্যাম বেনেগাল, রামচন্দ্র গুহ, বিনায়ক সেন, মণিরত্নম, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনের মতো বিদ্বজ্জনেরা। এরপরই, শুরু হয় চিঠির ল়ড়াই। মোদীকে পাল্টা চিঠি পাঠান কঙ্গনা রানাউত, প্রসূন জোশী-সহ ৬১ জন। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়ার ‘অপরাধে’ কাউকে জেলে পোরা হলে বা খুন করা হলে ওই বিদ্বজ্জনদের মুখে কুলুপ কেন, পাল্টা সেই প্রশ্ন তোলা হয় ওই চিঠিতে। কেন ওই বিদ্বজ্জনেরা পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটে হিংসার প্রেক্ষিতে মুখ খোলেননি সে প্রশ্নও উঠে আসে। এমনকি, ৪৯ জন বিদ্বজ্জনের বিরুদ্ধে বিহারে দেশদ্রোহিতার মামলাও করা হয়।
বিদ্বজ্জনদের এই দুই তালিকার কোনওটিতেই অবশ্য নাম নেই চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের। কিন্তু, ভিন্ন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাম রাজনীতির পক্ষে সওয়াল করে আসা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ভরা পদ্মায় ভেসে চলেছে হাজার হাজার ‘কলার ভেলা’, বিএসএফের নজর পড়ে না!