নির্ভয়ে মনের কথা বলতে ভরসা পটাইদারা

সোশ্যাল সাইটের আর একটি চরিত্র ক্যাবলা। কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়ায় এক দিন প্রবল উত্তেজিত তিনি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

একে ভোটের বাজার, তার উপরে সে দিন আবার দোল। দিনভর ‘রং-রুটে’ রাজনীতি দেখে বিকেলের দিকে মুখ খুললেন পটাইদা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘এ বার কোনটা বেশি চলছে পটাইদা? আবির না জল রং?’

Advertisement

পটাইদা উত্তর দিলেন, ‘‘শুধুই দল-রং!’’

ভোটের প্রচারে এসে এক জন বিপক্ষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করে গিয়েছিলেন। চায়ের আড্ডায় এক জন বলছিলেন, ‘‘নাড়ুর দাদা নাকি ঘুষ নিয়েছে! সত্যি নাকি পটাইদা?’’ পটাইদা বললেন, ‘‘কে জানে! নাড়ু তো মানছে না। বলছে, ক্যাশব্যাক।’’ ওই আড্ডাতেই কথা উঠল, ‘শান্টুর জেঠা নির্দল হিসেবে দাঁড়াবেন ভেবেছিলেন। প্রচার করতেন কী ভাবে পটাইদা?’ পটাইদা বললেন, ‘‘সব দেওয়ালে লিখতেন, আমাকে নিয়ে এক লাইন লিখে যান!’’

Advertisement

ভরা ভোট মরসুমে সোশ্যাল সাইট জুড়ে এখন এমনই বহু ‘দাদা’র উপস্থিতি। তাঁরা রক্ত-মাংসের চরিত্র নন, সকলেই নেটিজেনদের সৃষ্টি! দলবদলু নেতাদের নিয়ে তাঁরা টিপ্পনী কাটেন। কখনও আবার বলে দেন, ‘বুথ-ভিত্তিক ভোট গণনার পরে উন্নয়নের আসল চেহারা কী দাঁড়ায় দেখ!’ এমনই একটি চরিত্রের দাবি, ‘প্রদোষ মিত্র বলছেন, ভাগ্যিস কার্ডে ইংরেজিতে ‘মিটার’ লিখি, নইলে ভোটের বাজারে লোকে কী সব ভেবে বসত!’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক তথা ‘পটাইদা’-র সৃষ্টিকর্তা মানসপ্রতিম দাস বলছেন, ‘‘চারপাশের বহু জিনিস মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু, সরাসরি কিছু বলার উপায় নেই। গল্পকারেরা তাই গল্পের চরিত্র তৈরি করে সেই কথাগুলো বলেন। আমায় যে বিষয়গুলো বিরক্ত করে বা কৌতুক দেয়, সেগুলিই বলেন পটাইদা।’’ তাই পটাইদা কখনও জানতে চান, ‘‘আচ্ছা বুলু, এক সময় ‘জনতা’ ব্র্যান্ডের

স্টোভ ছিল না?’’ উত্তর আসে, ‘‘ছিল তো পটাইদা!’’ পটাইদা বলেন, ‘‘আমার ঠিক মনে পড়ছে না সেটা কখনও বার্স্ট করত কিনা!’’ মানসপ্রতিমবাবুর আরও দাবি, ‘‘ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ যে ভাবে প্রতিক্রিয়া দেন বা একটা ভুল ধারণার ভিত্তিতে যে ভাবে অনেক কিছু বলে দেন, সেটাকে বিদ্রূপ করাও এই চরিত্র সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য।’’

ভোটের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এমনই লেখা।

এই উদ্দেশ্য থেকেই ব্যাঙ্কের ই-কর্নারে ঢুকে থতমত খান পটাইদা। সেখানে দুই গ্রাহক কষে ঝগড়া করছেন, আর একটি এটিএম থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছে— ‘আপনার ভাষা নির্বাচন করুন!’ পটাইদাই এক দিন আবার উদাস হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আচ্ছা, শিষ্ট মানুষ দিয়ে কি আন্দোলন হয় না? তোরা বিশিষ্ট চাই বলে কাঁদিস কেন!’’ সোশ্যাল মিডিয়ারই আবার খবর, বেশ কিছু দিন দেখা নেই পটাইদার। খালে রাখা দু’নৌকোয় পা দিয়ে দাঁড়াতে পারেন কি না, দেখতে গিয়েছিলেন। তার পরে আর কী— সর্বাঙ্গে ব্যথা! শরীর খারাপের কারণ কী বলবেন বুঝতে না পেরে আর চিকিৎসকের কাছেও যাননি।

সোশ্যাল সাইটের আর একটি চরিত্র ক্যাবলা। কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়ায় এক দিন প্রবল উত্তেজিত তিনি। ট্রাবলশুটে ক্লিক করতেই তাঁর কম্পিউটার নাকি চেঁচিয়ে উঠে বলছে, ‘‘মাদারবোর্ড, বল, জয় শ্রীরাম।’’ আর একটি চরিত্র বটুবাবু বিমানে বসে ঘুমোচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে যেতে যেতে এক বিমানসেবিকা কিছু একটা বলতেই লাফিয়ে উঠে হাঁউমাউ জুড়ে দেন তিনি। লোকজন তাঁকে শান্ত করার পরে

জানা যায়, বিমানসেবিকা জিনিসপত্র বিক্রির জন্য ‘মারচেনডাইস’ বলতে বলতে এগোচ্ছিলেন। আজন্ম অফিসে কলম পেষা বটুবাবু শুনেছিলেন, ‘‘মার্চ এন্ড আইসে!’’

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা কিন্তু দারুণ উদ্যোগ। এমনিতে রাজনীতি একটা ভয়ের ব্যাপার। এ নিয়ে অনেকে সাহস করে সৃষ্টি করতে চান না। সাহিত্যে এ রকম রাজনৈতিক দাদা আমি পাইনি। সোশ্যাল মিডিয়াকে এ জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।’’

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘বাঙালির এমনিই রসবোধ কমে গিয়েছে। সেখানে এমন সৃষ্টি অনবদ্য। তা ছাড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এবং নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে পারার জন্যও এমন চরিত্রের সৃষ্টি করা দরকার।’’

পটাইদাই এক দিন বলছিলেন, ‘‘সব কিছু ছিমছাম। ঘরে ঘরে এক সন্তান।’’

তাতে কী?

পটাইদার উত্তর, ‘‘ভাষাও ছিমছাম। আ-কার কেটে গিয়েছে। উদার হয়ে গিয়েছে উদর!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement