পোদরা-রাজাবাগান

অঘটনের আতঙ্ক মাথায়, চলছে ঝুঁকির পারাপার

কালনার ভাগীরথীতে নৌকাডুবির ক্ষত এখনও দগদগে। তার পরেও গঙ্গায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি একই নৌকায় মানুষের সঙ্গে গবাদি পশু, মোটরসাইকেল বা মালপত্র নিয়ে পারাপার।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০২:৫১
Share:

বিপদ-সফর। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

কালনার ভাগীরথীতে নৌকাডুবির ক্ষত এখনও দগদগে। তার পরেও গঙ্গায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি একই নৌকায় মানুষের সঙ্গে গবাদি পশু, মোটরসাইকেল বা মালপত্র নিয়ে পারাপার।

Advertisement

কোনও গাঁ-গঞ্জ নয়, গঙ্গাকে মাঝে রেখে শহর কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে চলেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অভিযোগ উঠেছে, আদালতের নির্দেশকে পরোয়া না করেই কোনও বৈধ রুট-পারমিট ছাড়াই দিনের পর দিন এই খেয়া পারাপার চলছে হাওড়া শহর লাগোয়া নাজিরগঞ্জের কাছে পোদরা-রাজাবাগান রুটে। যে রুটে মাত্র তিন বছর আগেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাজাবাগান ঘাটের কাছে একটি নৌকা দু’টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল। গঙ্গায় তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল নৌকার তিন যাত্রীর। বাকিরা সাঁতরে পাড়ে উঠে পড়ায় বেঁচে গিয়েছিলেন সে যাত্রায়। এবং এই দুর্ঘটনার পরে ওই রুটে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন।

তিন বছর আগের সেই স্মৃতি এখনও ভোলেননি এলাকার মানুষ। তার মধ্যেই বছর দেড়েক আগে ফের ওই রুটে নৌকা চলাচল শুরু হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পুলিশকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। বন্ধ হয়নি ঝুঁকির পারাপার। এলাকার বাসিন্দা পার্থসারথি মণ্ডল বলেন, ‘‘পোদরা ঘাটে এই নৌকা চলাচলের পিছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এই চক্রটির সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ থাকায় বন্ধ করা যায়নি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পারাপার।’’

Advertisement

পার্থবাবু জানান, তিনি ও এলাকার এক বাসিন্দা অসিতকুমার বক্সীর নেতৃত্বে এই বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করতে ও পোদরাঘাট থেকে সরকারি লঞ্চ চালানোর দাবি নিয়ে ‘পোদরা-রাজাবাগান খেয়াঘাট উন্নয়ন সমিতি’ গঠন করেন। কলকাতা হাইকোর্টে এই নৌকা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলাও করে সমিতি। সে কারণে ২০০৬ সালে আদালত ওই রুটের নৌকা চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কয়েক বছর পরে আদালতের তোয়াক্কা না করে ফের ওই খোয়াঘাট থেকে নৌকা চলাচল শুরু হয়। পার্থবাবু বলেন, ‘‘এর মধ্যে হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি ওই ঘাট থেকে কয়েক মাস বড় লঞ্চও চালায়। কিন্তু যাত্রীরা লঞ্চে পারাপারের থেকে নৌকায় যাতায়াত বেশি পছন্দ করায় কিছু দিনেই লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সমবায় সংস্থা।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ৮টি যন্ত্রচালিত নৌকা বা ভুটভুটি চলে এই রুটে। যেখানে মানুষের সঙ্গে পারাপার করে গবাদি পশু, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও ব্যবসায়ীদের মালপত্র। প্রতি ক্ষেত্রে ভাড়া নেওয়া হয় আলাদা করে। যেমন যাত্রীপিছু ৪ টাকা। সাইকেল ৮ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকা, গবাদি পশু ১৫০ টাকা, মালপত্র ৩০ থেকে ১০০ টাকা। বাসিন্দাদের মত, ওই ঘাটে নৌকা চালিয়ে আয় অনেক। প্রতিটি নৌকায় দিনে গড় আয় হয় দু’হাজার টাকা। অর্থাৎ, মাসে একটি নৌকায় আয় হয় ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ৮টি নৌকায় গড়ে মাসে আয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।

পোদরা-রাজাবাগান খেয়াঘাট উন্নয়ন সমিতির দাবি, রাজাবাগান ও হাওড়ার কিছু ব্যবসায়ী এই অবৈধ নৌকা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। উল্টে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরেই তার প্রতিলিপি তাঁদের হাতে পৌঁছে যায়।

তৃণমূলের থানামাকুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সঞ্চালক পলাশ বাছাড় বলেন, ‘‘সব জায়গায় টাকা খাইয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চলছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement