ঐত্রীর মায়ের পাশে এ বার অন্য মায়েরা

বিকেল চারটে নাগাদ আমরি কর্তৃপক্ষ জানান, ঐত্রীর পরিজনদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। সন্তানহারা বাবা-মায়ের প্রতি সহানুভূতি জানাতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

সুবিচার চেয়ে মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালের সামনে জমায়েত। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

কেউ পেটের যন্ত্রণায় কাতর মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে আর ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। কেউ আবার মা ডাক শোনার আগেই সন্তানকে হারিয়েছেন। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন প্রত্যেকেই। এ বার সুবিচার পাওয়ার লড়াইয়ে জোট বেঁধেছেন ওঁরা।

Advertisement

শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালের সামনে মোমবাতি মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন ঐত্রী দে-র মা শম্পা ও বাবা জয়ন্ত দে। তাতে যোগ দিয়েছিলেন সুনেত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, শালু চক্রবর্তীর মতো সেই মায়েরা, বিভিন্ন হাসপাতালে যাঁদের সন্তানের মৃত্যুর পরে একই ভাবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন ইএম বাইপাস ধরে কিছুটা হেঁটে আসার পরে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারের পাশে বসে মোমবাতি জ্বেলে প্রতিবাদ জানান তাঁরা সবাই।

বিকেল চারটে নাগাদ আমরি কর্তৃপক্ষ জানান, ঐত্রীর পরিজনদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। সন্তানহারা বাবা-মায়ের প্রতি সহানুভূতি জানাতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। তাঁরা জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সেই মোতাবেক দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।

Advertisement

গত সোমবার সর্দি-জ্বর নিয়ে মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ঐত্রী। বুধবার সকালে সে মারা যায়। এর পরেই মৃত শিশুটির পরিজনেরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তখনই হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় ঐত্রীর মা শম্পাদেবীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ঐত্রীর পরিবারের দাবি, জয়ন্তীদেবী তাঁদের বলেছিলেন, ‘‘মস্তানি করবেন না। এখানে আমার থেকে ব়ড় মস্তান কেউ নেই।’’ এর পরেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ঐত্রীর পরিবার হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পাল্টা অভিযোগ করে হাসপাতালও। হাসপাতাল তাদের অভিযোগে দাবি করেছিল, জয়ন্তীদেবীকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এ দিন অবশ্য সব অভিযোগই তুলে নেওয়া হয়।

এ দিন শম্পাদেবী প্রশ্ন তোলেন, সন্তানের রোগ কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কে কেন তার মাকে ঠিকমতো সব কিছু জানানো হবে না? রোগীর পরিজনদের সঙ্গে ডাক্তারদের কথা বলার সময় নেই কেন? তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে মারা যাওয়ার পরে ডাক্তার বললেন, মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারছেন না। তা হলে কে বুঝবে? ডাক্তার উত্তর দিতে না পারলে কে দেবেন?’’

এ দিনও বারবার জয়ন্তীদেবীর দুর্ব্যবহারের প্রসঙ্গ ওঠে। ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ছেলের চিকিৎসা চালাচ্ছেন মুকুন্দপুরের বাসিন্দা অণিমা সিংহরায়। তিনি জানান, জন্মের পর থেকেই নানা সমস্যা রয়েছে তাঁর ছেলের। অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে শেষ অস্ত্রোপচার হয়। তখন বিমার কাগজ আটকে যাওয়ায় বিল মেটাতে দেরি হয়। তার জন্য রোজই জয়ন্তীদেবী খারাপ ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ। এমনকী, রোগীর ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। অনিমাদেবীর কথায়, ‘‘জয়ন্তীদেবী বলতেন, ‘টাকা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে রোগী ভর্তি করবি না।’ হাসপাতাল-কর্তাদের দুর্ব্যবহারের কথা জানালেও তাঁরা কিছু করেননি।’’ জয়ন্তীদেবী এ দিনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

গত বছর অক্টোবরে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় বছর এগারোর ঋতজা। তার পিত্তাশয়ে পাথর হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পরেই ঘটে মৃত্যু। পরিজনদের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল। এ দিন ঋতজার মা সুনেত্রাদেবী বলেন, ‘‘রবিবারে চিকিৎসক মেয়েকে দেখতে যাননি। ফোনে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু উনি পাত্তা দেননি। বলেছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

ঐত্রীর হার্ট বিকল হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সুনেত্রাদেবী বলেন, ‘‘কিছু হলেই বলবে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। আমার মেয়ের সময়েও বলেছিল।’’ পাশে দাঁড়িয়েছেন শালু চক্রবর্তীও। গত বছরের এপ্রিলে অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যায় তাঁর চার মাসের মেয়ে কুহেলি চক্রবর্তী। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চালিয়েছেন শালুদেবী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘গাফিলতিতে মৃত্যু বন্ধ হোক। হাসপাতাল ব্যবসার জায়গা নয়। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুঝি। তাই শম্পার পাশে আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement