কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আমজাদ মিয়াঁ। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে আনার সময়ে ক্যানসার আক্রান্ত প্রৌঢ়ের রক্তপাত দেখে ভয় পেয়ে যান পরিজনেরা। কোনও মতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অঙ্কোলজির বহির্বিভাগে রোগীকে নিয়ে পৌঁছন তাঁরা। অভিযোগ, চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে চিকিৎসা নয়, মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা আমজাদ মিয়াঁর জুটল চরম হয়রানি। দু’সপ্তাহ আগে ওই হাসপাতাল থেকেই করোনার চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন আমজাদ। সেই সময়ের ছুটির কাগজে কোভিড পজ়িটিভ লেখা রয়েছে। তাই শনিবার অঙ্কোলজির চিকিৎসকেরা ওই প্রৌঢ়কে ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
আমজাদ গোপনাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত। গত ২৭ অগস্ট সেই রোগের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএমে ভর্তি হন। কিন্তু করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করে এসএসকেএম। সেখানে সিবি-টপ ব্লকে ২৫ দিন থাকার পরে ২২ সেপ্টেম্বর আমজাদ ছুটি পান। ছুটির নথিতে অঙ্কোলজি বিভাগে রেফারের পাশাপাশি রোগীর কী ধরনের ক্যানসার হয়েছে, তারও উল্লেখ আছে। সেই সঙ্গে কোভিড পজ়িটিভেরও উল্লেখ রয়েছে নথিতে। যে কারণে এ দিন অঙ্কোলজির চিকিৎসকেরা শত অনুরোধেও আমজাদকে দেখতে চাননি বলে অভিযোগ।
সিবি-টপে থাকার সময়ে আমজাদের দেহে ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে কি না জানতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় করোনা পরীক্ষা হয়। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে ২২ সেপ্টেম্বর তাঁকে কোভিড ওয়ার্ড থেকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এ দিন সেই নথি দেখানোর পরেও আমজাদকে কেন ফিরিয়ে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন উঠছে।রোগীর ভাইপো নাসিম পারভেজ জানান, এ দিন সকালে ডোমকল থেকে বাসে ধর্মতলায় আসেন তাঁরা। সাত ঘণ্টার যাত্রার ধকলে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন আমজাদ। বাস থেকে নামার পরে তাঁর রক্তপাত ও প্রবল যন্ত্রণা শুরু হয়। কোনও মতে তাঁকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যালে পৌঁছন পরিজনেরা। ভাইপোর কথায়, ‘‘ছুটির নথিতে যে লেখার ভুল হয়েছে, তা তো অঙ্কোলজির চিকিৎসকেরাও বুঝেছেন। কিন্তু চিকিৎসা না করেই আমাদের বার করে দিল।’’
নথি সংশোধনের জন্য জরুরি বিভাগে গেলে সেখান থেকে সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সুপারের কার্যালয়ের রক্ষী লিখিত আবেদন নিয়ে সোমবার আসতে বলেন। আমজাদ বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে ডোমকল থেকে এসেছি। বাড়ি ফিরে আবার আসা সম্ভব? ক্যানসারের চেয়েও বেশি যন্ত্রণার এই হয়রানি!’’
কলকাতা মেডিক্যালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকলে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা নয়। আজ, রবিবার ডেপুটি সুপারের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের দেখা করতে বলেছেন তিনি। প্রৌঢ়ের চিকিৎসায় সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন উপাধ্যক্ষ।