অস্ত্রোপচারের যন্ত্রই চুরি হয়ে গেল পিজিতে

কোমরের হাড় প্রতিস্থাপনের জন্য এক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে। শল্য চিকিৎসক থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান— সবাই তৈরি। নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রোপচারের আগে হাড় কাটার যন্ত্র জীবাণুমুক্ত (স্টেরিলাইজ) করে নেওয়ার কথা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কোমরের হাড় প্রতিস্থাপনের জন্য এক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে। শল্য চিকিৎসক থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান— সবাই তৈরি। নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রোপচারের আগে হাড় কাটার যন্ত্র জীবাণুমুক্ত (স্টেরিলাইজ) করে নেওয়ার কথা। কিন্তু যন্ত্রপাতি সাজাতে গিয়ে টেকনিশিয়ানরা দেখতে পেলেন, হাড় কাটার করাতের বাক্সই উধাও। ওই করাতের দাম কয়েক লক্ষ টাকা। বাক্সটি অবশ্য তখন পাওয়া যায়নি। শেষে জরুরি ভিত্তিতে অবস্থা সামাল দিয়ে ওই রোগীর কোমরের হাড় প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, উপরের ঘটনাটি ঘটেছিল গত সপ্তাহে, এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে। রোগীর কোমরের হাড় প্রতিস্থাপন ঠিক মতো হলেও ওই হাড় কাটার করাতের বাক্স এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি কোথায় গেল, তা জানতে পুলিশের দ্বারস্থ হয় এসএসকেএম হাসপাতালে হাড় কাটার যন্ত্রপাতি সরবারহকারী কাশীপুরের বেসরকারি সংস্থাটি। শেষমেশ জানা যায়, চুরিতে জড়িত ওই সংস্থারই এক কর্মী। অন্য এক অভিযোগে মাসখানেক আগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মীই এসএসকেএমে পরিচিতির সুযোগ নিয়ে এই কাণ্ড ঘটায়। এই ঘটনায় আবারও প্রকট হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের সুরক্ষার দিকটি।

কী ভাবে কিনারা হল যন্ত্র চুরির?

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে ভবানীপুর থানার অফিসারেরা প্রথমে বারুইপুর থেকে সুজয় ভট্টচার্য নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেন। তাকে জেরা করে সোমবার রাতে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে ধরা হয় বিজয় কাসেরা নামে এক ব্যবসায়ীকে। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের হাড় কাটার করাতটিও।

পুলিশের দাবি, হাড় কাটার যন্ত্রপাতি এসএসকেএমে সরবরাহ করে কাশীপুরের যে বেসরকারি সংস্থা, সুজয় সেখানকারই প্রাক্তন কর্মী। চিকিৎসা মহলে সে সেরা ওটি-টেকনিশিয়ান হিসেবে পরিচিত। মাস দেড়েক আগে অন্য একটি অভিযোগে ওই সংস্থাই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল। পুলিশের দাবি, সুজয় তাদের জানিয়েছে, এর বদলা নিতেই সে ওই যন্ত্র চুরি করে। চুরি করা যন্ত্র সে বিজয়ের কাছে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল। পুলিশ জেনেছে, বিজয়ের সংস্থাও হাড় কাটার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, হাড় প্রতিস্থাপনের মতো ঘটনায় অস্ত্রপচারের জন্য প্রয়োজন হাড় কাটার করাত-সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। যা তৈরি করে একটি মার্কিন সংস্থা। কলকাতায় ওই সংস্থার প্রতিনিধি বা ডিস্ট্রিবিউটর কাশীপুরের সংস্থাটি। কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারের সময়ে তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন টেকনিশিয়ান হিসেবে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কোনও অস্ত্রপচারের আগে যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত করার জন্য তা বিশেষ আর একটি যন্ত্রে ৬-৮ ঘণ্টা রাখতে হয়। ওই রোগীর কোমরের হাড় প্রতিস্থাপন হওয়ার কথা ছিল ১৪ নভেম্বর, সোমবার। তার আগের দিন হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগ বন্ধ থাকায় ১২ তারিখ কাশীপুরের সংস্থার প্রতিনিধিরা হাড় কাটার করাতটি এসএসকেএম হাসপাতালের ওই বিশেষ যন্ত্রে রেখে যান।

পুলিশের দাবি, চাকরিতে বরখাস্ত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে সুজয় ১২ তারিখেই অর্থোপেডিক বিভাগে যায়। টেকনিশিয়ান হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত, এই সুযোগ নিয়ে সে ওই বিশেষ যন্ত্র থেকে হাড় কাটার করাত-সহ প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে যায় জামশেদপুরে বিজয়ের কাছে। তাকে ৫০ হাজার টাকায় ওই যন্ত্র বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে সে।

কী ভাবে ধরা পড়ল সুজয়?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ১৪ নভেম্বর ওই ঘটনার পরে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন মার্কিন সংস্থাটির সঙ্গে। তাঁরা যোগাযোগ করেন কাশীপুরের ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে। পরে কাশীপুরের সংস্থাটিই অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তে নেমে পুলিশ ১২ নভেম্বর থেকে অর্থোপেডিক বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করে। তাতে দেখা যায়, সন্দেহভাজন এই যুবক খালি হাতে ওই বিভাগে ঢুকছে। কিন্তু বেরোনোর সময়ে তার হাতে কিছু একটা বস্তু রয়েছে। তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, সিসিটিভি-র পাশাপাশি তাঁরা কাশীপুরের সংস্থাটির বিভিন্ন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে জানতে পারেন, সুজয় নামে তাঁদের এক কর্মীকে কিছু দিন আগে বরখাস্ত করা হয়েছে চাকরি থেকে। সংস্থার কর্তাদের ওই সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতেই তাঁরা সুজয়কে চিনতে পারেন। এর পরেই সুজয়কে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করায় সে পুরো ঘটনা স্বীকার করে নেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement