—প্রতীকী চিত্র।
তেতলার ঘরে ক্লাস করছিল খিদিরপুর অ্যাকাডেমির অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া রাজা দাস। ক্লাসঘরে পাখা চললেও জানলা দিয়ে রোদ আসছিল। কিছু ক্ষণ সেখানে বসার পরেই মাথা ঘুরতে শুরু করে তার। রাজাকে তখন নীচের একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন বলেন, ‘‘ওকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা একটি ঘরে পাখার তলায় বসিয়ে রাখি। বার বার জল দিই। সুস্থ বোধ করলে বাড়ি পাঠানো হয়।’’ সালেহিন জানান, বৃহস্পতিবারও তাঁর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির দুই পড়ুয়া মিড-ডে মিল খাওয়ার পরে গরমে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতি শুধু খিদিরপুর অ্যাকাডেমিতে নয়। গরমের ছুটির শেষে স্কুল খোলার পরে শহরের বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়ারা এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অস্বস্তি হচ্ছে সকলেরই। স্কুল খোলার পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল খানিকটা কম। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও শিক্ষকেরা অবশ্য কোনও মতেই চান না, স্কুল আবার বন্ধ হোক। বরং গরম মোকাবিলার নানা পন্থা অবলম্বন করছেন তাঁরা। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির।
বরাহনগর মায়াপীঠ নারী শিক্ষা আশ্রমের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের এক ছাত্রী ও এক শিক্ষক গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওই শিক্ষক অসুস্থ বোধ করায় বাড়ি চলে যান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর হিট স্ট্রোক হয়েছিল। আর সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। বৃহস্পতিবার স্কুলে এসে গরমে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে সে।’’ শর্মিষ্ঠা জানান, গরমের মোকাবিলায় প্রতিটি ক্লাসঘরে অতিরিক্ত পাখা লাগানো হয়েছে। বেশি করে পানীয় জলেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটের পরে লোডশেডিং হয়ে যাওয়ায় পাখা বন্ধ হয়ে যায় কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করতে থাকে। বিদ্যুৎ না আসায় এক পিরিয়ড আগেই ছুটি দিয়ে দিতে বাধ্য হন তাঁরা।
পশ্চিম বেহালার একটি স্কুলে বৃহস্পতিবার দু’জন পড়ুয়া গরমে অসুস্থ হয়ে বমি করতে শুরু করে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেহালারই ‘ভোলানাথ হালদার স্মৃতি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’-এর প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে কোনও পড়ুয়া অসুস্থ বোধ করলেই তাকে গ্লুকোজ়ের জল বা ওআরএস দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছি, কেউ অসুস্থ বোধ করলে তাকে স্কুলে আসতে হবে না।’’
শিক্ষকদের অনেকের আবার অভিযোগ, সরকার থেকে নতুন যে নীল-সাদা পোশাক দেওয়া হয়েছে, তাতে সুতির ভাগ কম। সেই কারণেই পড়ুয়াদের গরম আরও বেশি লাগছে। উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, তাঁরা পড়ুয়াদের জানিয়েছেন, নতুন নীল-সাদা পোশাক না পরে এই গরমের দিনগুলিতে আগের পোশাক পরেই তারা স্কুলে আসুক। যদিও স্কুলের পোশাকের মানের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হয়নি বলেই শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি।
বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় এবং বেহালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বেরা জানিয়েছেন, সব থেকে উপরের ক্লাসঘরগুলিই বেশি তেতে থাকছে। তাই ওই ক্লাসগুলিকে নীচে নামিয়ে আনা হয়েছে।