— প্রতীকী চিত্র।
আদালতের নির্দেশ, কালীপুজোর রাতে শুধু দু’ঘণ্টাই (৮টা থেকে ১০টা) বাজি ফাটানো যাবে। সেই বাজি হতে হবে সবুজ বাজি। অন্য কোনও ধরনের বাজি ফাটানো দণ্ডনীয় অপরাধ! এই মুহূর্তে আদালতের সেই নির্দেশই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অনেকেরই দাবি, কালীপুজোর তিন দিন আগে থেকেই শহরের নানা জায়গায় দেদার বাজি ফাটানো শুরু হয়েছে। যার বেশির ভাগই সবুজ বাজি নয়! অনেকে গত রবিবার থেকেই এমন বাজির জেরে অতিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ করছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, চলতি বছরেও কি তবে দেদার বেআইনি শব্দবাজির তাণ্ডব চলবে? পরিবেশকর্মী থেকে সচেতন নাগরিকদের অনেকের আবার প্রশ্ন, ‘বাজি ক্লাস্টার’ তৈরির আশ্বাসই বা পূরণ হল কই? এমন বাজির স্তূপের উপরে থাকা কোনও জায়গায় আবার অতীতের মতো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটবে না তো?
ইএম বাইপাস লাগোয়া উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের বাসিন্দা মোহনা সরকারের অভিযোগ, সোমবার রাত থেকে তাঁদের এলাকায় এমন বাজি ফাটছে যে, হাঁপানির সমস্যা থাকা তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। পাটুলির বাসিন্দা নেহা মান্নার অভিযোগ, রবিবার গভীর রাতে বেশ কিছু বাজি ফাটানো হয়েছে তাঁদের এলাকায়। সোমবারও একই ঘটনা ঘটায় তিনি থানায় ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ নজর রাখছে বলেই রেখে দেওয়া হয়। বালিগঞ্জ, পঞ্চসায়র, ভবানীপুরের পাশাপাশি বেলেঘাটা, ফুলবাগান, তালতলা, কাশীপুরের মতো এলাকা থেকেও বাজি ফাটানোর অভিযোগ এসেছে।
এখনই এই পরিস্থিতি কেন? পরিবেশকর্মী তথা ‘সবুজ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক নব দত্তের দাবি, প্রশাসনিক দায়সারা মনোভাবই এর জন্য দায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৮-র ২৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট এবং ২০২৩-এর ১১ অক্টোবর হাই কোর্ট বাজি নিয়ে কড়া নির্দেশিকা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী, পুলিশের নজরদারিতে হওয়া বাজি বাজার ছাড়া অন্য কোথাও যে কোনও ধরনের বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ। বৈধ বাজারেও শুধুই সবুজ বাজি বিক্রি করা যাবে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি) এবং রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ অর্গানাইজ়েশন’ (পেসো) বাজি পরীক্ষা করবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সহযোগিতা করবে। কিন্তু নিরি নিরুদ্দেশ, পেসোরও দেখা নেই। আর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে।’’ এর পরে তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘গত বছর পর্যন্ত সরকার বলছিল, সময় পাওয়া যায়নি। এর পরে ক্লাস্টার তৈরি করে বাজির সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে। এক বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, কাজ হয়নি। এখন সবুজ বাজির মোড়কেই দেদার বেআইনি বাজি বিক্রি চলছে। কিউআর কোড স্ক্যান করলে শংসাপত্র বেরোচ্ছে না। গান বাজছে, ভিডিয়ো চলছে।’’
কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘থানা স্তরে কড়া নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে। ধরা পড়লে আমাদের তরফে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’