পরীক্ষা রইল বাকি, পথেই মৃত্যু ছাত্রের

পুলিশের সন্দেহ, অ্যাপ-ক্যাবের চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এই বিপত্তি। তাঁদের আরও অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে গাড়ির গতিও খুব বেশি ছিল। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে চালক সুজয় ঘরামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

সায়ন্তন বিশ্বাস

একটি অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করে শিবপুর থেকে রাজারহাটে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন ওঁরা চার বন্ধু। কিন্তু মাঝপথে দুর্ঘটনা যে এক বন্ধুকে কেড়ে নেবে, ভাবতে পারেননি তিন সহপাঠী। মা উড়ালপুল পেরিয়ে অ্যাপ-ক্যাবটি রাস্তার ধারের সেতুর রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা মারলে আহত হন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)-র পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তরের ওই চার ছাত্র। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তাঁদের এক জন, কৃষ্ণনগরের সায়ন্তন বিশ্বাস (২২)।

Advertisement

পুলিশের সন্দেহ, অ্যাপ-ক্যাবের চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এই বিপত্তি। তাঁদের আরও অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে গাড়ির গতিও খুব বেশি ছিল। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে চালক সুজয় ঘরামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সাতসকালে রাজারহাটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘জেস্ট’ (জয়েন্ট এলিজেবিলিটি স্ক্রিন টেস্ট) পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন সায়ন্তন ও তাঁর তিন সহপাঠী। মা উড়ালপুল পার হওয়ার পরে মেট্রোপলিটন মোড়ের কিছুটা আগে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। চালক ও চার আরোহী আহত হন। তদন্তকারীদের অনুমান, তীব্র গতিতে রেলিংয়ে ধাক্কা মারায় গাড়ির ছাদে সায়ন্তনের মাথা ঠুকে যায়। গুরুতর চোট লাগে কাঁধ ও মাথায়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ধাক্কার চোটে গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে যায়। চাকাও ফেটে যায়। আতর্নাদ শুনে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। আহত পাঁচ জনকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে চার পড়ুয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের ধারে এক হাসপাতালে। সেখানে সায়ন্তনকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

গাড়িটি থেকে তখনও গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

গাড়িচালক সুজয়ের পাশে ছিলেন সায়ন্তনদের এক সহপাঠী সুদাম পাণ্ডা। সায়ন্তন ছিলেন পিছনে। পুলিশ জানিয়েছে, সময়মতো এয়ারব্যাগ খুলে যাওয়ায় বেঁচে যান সুজয়। তবে ধাক্কার প্রাথমিক অভিঘাতে তাঁর ও সুদামের আঘাত ছিল গুরুতর।

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে চলে আসেন আইআইইএসটি-র অধিকর্তা অজয় রায়, রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শিক্ষক ও ছাত্রেরা। দুপুরে কৃষ্ণনগর থেকে হাসপাতালে পৌঁছন সায়ন্তনের বাবা সুজিত বিশ্বাস, মা সোমা বিশ্বাস, দাদা সৌম্যজিৎ বিশ্বাস-সহ অন্য আত্মীয়েরা।

মেধাবী ওই ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর সহপাঠীরা। পেশায় শিশু-চিকিৎসক সুজিতবাবু বলেন, ‘‘ছেলেকে কখনও প়ড়ার জন্য বলতে হয়নি। বইয়ের পোকা ছিল।’’ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা সায়ন্তনের। মাধ্যমিকে ৯০ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৭ শতাংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে গত বছর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় ৭৪ শতাংশ নিয়ে স্নাতক হন তিনি।

সায়ন্তনের পিসি মঞ্জুশ্রী দাসের অভিযোগ, ‘‘চার দিকে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ-এর এত প্রচার। তার পরেও চালকেরা নিয়ম মানবেন না?’’

আইআইইএসটি-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘গুরুতর আহত সায়ন্তনকে ওই অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া উচিত হয়নি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের।’’ ওই হাসপাতালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘সায়ন্তনকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হলেও, আইআইইএসটি-র ছাত্রদের কেউ বন্ডে সই করে তাঁকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।’’

ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর ধারা যোগ করা হতে পারে চালকের বিরুদ্ধে।’’ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, অ্যাপ-ক্যাবের চালকের মাথায় চোট লেগেছে। তবে এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। সায়ন্তনের তিন সহপাঠীও আপাতত বিপন্মুক্ত বলে জানায় পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement