সল্টলেকের ডিএফ ব্লকে ফুটপাতের দখল নিয়েছে দোকান। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
কোথাও ফুটপাত থাকলেও সেখানে হাঁটাচলার উপায় নেই, এমনই বেহাল দশা। কোথাও ফুটপাত জুড়ে গাড়ির অবৈধ পার্কিং, আবর্জনা অথবা নির্মাণ সামগ্রী স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে আছে। কোথাও আবার ফুটপাতই নেই। বিধাননগর পুর এলাকার বহু ওয়ার্ডে উন্নয়নের অনেক দাবি এ ভাবেই থমকে যায় ফুটপাতে এসে।
বিধাননগরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ফুটপাতের বেহাল দশা থেকে শুরু করে দখলদারির সমস্যা— সবই বছরের পর বছর চলছে। এমনও অভিযোগ, কোথাও কোথাও ফুটপাত থাকলেও তা এমনই উঁচু-নিচু যে, পথচারীদের পক্ষে হাঁটা মুশকিল। বাগুইআটির বাসিন্দা সমীর জানার কথায়, ‘‘সল্টলেকের ফুটপাত ঠিক থাকলেও হাঁটাচলা করা মুশকিল। কারণ, ফুটপাত কোথাও অনেকটা উঁচু, কোথাও নিচু। ফুটপাতে পেভার ব্লক বসানো হলেও অনেক জায়গায় তা ভেঙেচুরে গিয়েছে। ফুটপাত ধরে সেখানে হাঁটা দায়।’’ সল্টলেকের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী রাধানাথ চাঁদ বলেন, ‘‘ফুটপাত ব্যবহারে অনেক সমস্যা রয়েছে। দেখতে সুন্দর লাগলেও ফুটপাত উঁচু-নিচু হওয়ায় প্রবীণদের হাঁটাচলায় সমস্যা হয়।’’ সল্টলেকের ফুটপাতে বয়স্কদের পক্ষে চলাফেরা করা খুবই সমস্যার, এই অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের মতে, বয়স্কদের অনেকেই হুইলচেয়ারে বন্দি। তাই তাঁদের পক্ষেও উঁচু-নিচু ফুটপাত ব্যবহার করা কার্যত অসম্ভব। সল্টলেকবাসী মিন্টু বসাকের সাফ কথা, ‘‘বছরভর সাদা-নীল রং লাগিয়েই বেহাল দশা দূর হয় না। ফুটপাত সংস্কারে কার্যত ব্যর্থ পুরসভা।’’
এই অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি মানতে নারাজ বিদায়ী পুর প্রতিনিধিরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাস্তা সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গেই ফুটপাত সংস্কারের পরিকল্পনাও কার্যকর করা হবে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তাই আগেও ফুটপাত মেরামত করে পেভার ব্লক বসানো হয়েছিল। সমস্যা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করেছে পুরসভা। নিশ্চিত ভাবে আগামী দিনে আরও উন্নয়ন ঘটবে। তার অংশ হিসাবে ফুটপাতও সংস্কার করা হবে।’’
সল্টলেকে ফুটপাতের ক্ষেত্রে আরও বড় সমস্যা— গাড়ি পার্কিং এবং বাগান। বিদায়ী পুর প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও গাড়ি রাখার জায়গা বাড়েনি। তাই অনেকেই বাড়ির সামনের ফুটপাতে গাড়ি রাখেন। অনেকে আবার বাড়ি সংলগ্ন ফুটপাত ‘দখল’ করে বাগান করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। এর আগেও পুরসভার তরফে এ নিয়ে বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত সাড়া মেলেনি।
রাজারহাট-গোপালপুরের ক্ষেত্রে কেষ্টপুর, বাগুইআটি, জ্যাংড়া-সহ একাধিক ওয়ার্ডে ফুটপাতেরই বালাই নেই। ফলে হাঁটাচলা করতে রাস্তাই সম্বল পথচারীদের। কেষ্টপুরের বাসিন্দা সুবল মণ্ডল জানান, রাস্তায় গাড়ির চাপ আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু সর্বত্র ফুটপাত নেই। ফলে রাস্তা ধরেই চলাচল করতে হয়। তার জেরে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
সমস্যার কথা স্বীকার করেও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুশোভন (মাইকেল) মণ্ডল বলেন, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা এলাকায় সর্বত্র ফুটপাত নেই, এটা ঠিক। ফুটপাত তৈরি করতে গেলে রাস্তার পরিসর আরও ছোট হয়ে যাবে, যেটা সম্ভব নয়। রাস্তার ধারে খোলা নর্দমার পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরি করে সেখানে ফুটপাত করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আগামী দিনে নিশ্চয়ই ভেবে দেখা হবে।’’
পুরকর্তাদের এই যুক্তি মেনে নিয়েও বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফুটপাতের জায়গা না থাকলেও রাস্তার পাশে দোকান থেকে শুরু করে নানা রকম দখলদারি শুরু হয়েছে। তবে তা নিয়ে পুরসভা চুপ। যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁরা উচ্ছেদের বিপক্ষে। তবে ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে কেউ ফুটপাত দখলের চেষ্টা করলে সেটা বরদাস্ত করা হয় না। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ‘‘যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতের উপরে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকে, তাতে শাসকদলের কথা ভুল বলেই প্রমাণিত হয়।’’
বিধাননগরের বিদায়ী পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, ফুটপাতের সমস্যা সম্পর্কে পুরসভা ওয়াকিবহাল। এর আগে ফুটপাত সংস্কারের কাজও হয়েছিল। রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি, একই সঙ্গে ফুটপাত সংস্কারেরও পরিকল্পনা করা রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খসড়া তৈরি করে রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী দিনে সেই পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে।