প্রতীকী ছবি।
দশমী মানেই বিষণ্ণতা। শারদোৎসবের শেষে রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই বিষণ্ণতার রেশ যাতে আরও না বাড়ে, সে দিকেই নজর রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি এখনও পুরোমাত্রায় রয়েছে। আর ব্যবস্থা না নিলে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির জেরে ফাঁকা পুজো মণ্ডপ অচিরেই ডেঙ্গির মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে।
শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পুজোর ক’দিন দর্শনার্থীরা যে মণ্ডপ দেখে বেড়িয়েছেন, পুজোর শেষে সেটিই যেন বিষণ্ণতার কারণ না হয়, তা দেখা অত্যন্ত জরুরি।’’ পুজো উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিষয়টিতে স্থানীয় পুরসভার কড়া নজরদারিরও প্রয়োজন রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
রাজ্যে এই মুহূর্তে মারাত্মক হারে বাড়ছে ডেঙ্গি। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গি-রোগীর সংখ্যা। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি বন্ধ না হলে বা ঠান্ডা না পড়লে মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ চলতেই থাকবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ দিকে আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে ফের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে চিকিৎসক মহল। কারণ, সে ক্ষেত্রে ফাঁকা পুজো মণ্ডপের বাঁশের কোটরে জল জমলেই বিপদ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা, থিমের বিভিন্ন উপকরণেও জল জমার আশঙ্কা রয়েছে। পরজীবী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অতি ছোট কোনও জায়গায় অল্প জল জমলেও সেখানে ডেঙ্গির মশার লার্ভা জন্মাতে পারে।
বিগত কয়েক বছরের বাস্তব চিত্র বলছে, পুজোর পরে অধিকাংশ মণ্ডপই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পুজো শুরুর আগে মণ্ডপ তৈরিতে যে তৎপরতা চোখে পড়ে, পুজো মিটলে বাঁশের কাঠামো খুলে জায়গা সাফসুতরো করার ক্ষেত্রে সেই তৎপরতা দেখা যায় না। ফলে পড়ে থাকা উপকরণে জল জমার আশঙ্কা থাকেই।
পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, একই মণ্ডপে লক্ষ্মীপুজো করা হয় বলে দুর্গাপুজোর পরে সেই মণ্ডপ সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলা সম্ভব হয় না। পরে কালীপুজোর মণ্ডপের বরাত এলে তখন দুর্গাপুজোর মণ্ডপের বাঁশ খোলা হয়। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘বৃষ্টির প্রকোপ চলছেই, এর মধ্যে ভাঙা মণ্ডপের বাঁশ, ত্রিপল ইত্যাদিতে জল জমে থাকলে সেখানে মশা ডিম পাড়বে এবং ডেঙ্গির দৌরাত্ম্য চলতেই থাকবে। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি পুজো উদ্যোক্তাদেরও বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যাঁরা যত দ্রুত মণ্ডপ পরিষ্কার করবেন, তাঁদের দরকারে পুরস্কৃত করা হোক।’’
পুজোর পরে যাতে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি না পায়, তার জন্য স্থানীয় পুর প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। হাওড়ার পুর প্রশাসক তথা চিকিৎসক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজো না মেটা পর্যন্ত কোথাও মণ্ডপ খোলা হয় না। তাই ওই পুজোর পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মণ্ডপ খুলে ফেলা এবং মাটিতে করা গর্ত বুজিয়ে দেওয়ার জন্য সকলকে বলা হবে।’’ পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ সোমনাথ দে-ও বলছেন, ‘‘বিসর্জনের সময়ে প্রতিটি ঘাটে এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর পরে পুরকর্মীরাও এই বিষয়টিতে নজর রাখবেন।’’ আবার বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘ডেঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এই বিষয়টিতেও জোর দেওয়া প্রয়োজন। পুজোর শুরুতে সমন্বয় বৈঠকে সকলকে বলা হয়েছিল। কিন্তু কে কতটা মানলেন, তার দিকে নজর রাখতে হবে।’’
যদিও নাগরিকদের প্রশ্ন, ‘‘পুজো মিটে যেতেই সব কিছু ফের গয়ংগচ্ছ হয়ে যাবে না তো?’’