গৌরীরানি সরকার।
গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়েছেন দশ বছর আগে। এত দিনে পো়ড় খাওয়া চালক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরই গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল এক বৃদ্ধার। আহত আরও এক জন। সোমবার সকাল সওয়া আটটা নাগাদ কসবার রাজডাঙা রোডের ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম গৌরীরানি সরকার (৭০)। বাড়ি গরফার নিবেদিতা রোডে। আহত শেফালি দাসকে (৬৮) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মাথায়, ঘাড়ে চোট নিয়ে বাড়িতেই শয্যাশায়ী তিনি। অনিন্দিতা রায় নামে অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। ওই মহিলা এক সময়ে স্কুলে পড়াতেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দুই বৃদ্ধা প্রাতর্ভ্রমণ সেরে ফিরছিলেন। নিয়ম মেনে রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষেই হাঁটছিলেন তাঁরা। অনিন্দিতাদেবী পিছন থেকে এসে ধাক্কা দেন। গৌরীরানি দেবীকে বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথম বার ধাক্কা দেওয়ার পরে গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওই মহিলা। পুলিশের সন্দেহ, দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
অনিন্দিতাদেবীর শ্বশুর অসিতচন্দ্র রায়ের দাবি, তাঁর পুত্রবধূর লাইসেন্স থাকলেও গা়ড়ি চালানোর অভ্যাস ছিল না। তাই পারিবারিক গাড়ি নিয়ে হাত পাকাতে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাজু নামে এক চালকও সঙ্গে ছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পথ নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশ নানা জায়গায় প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, এ সব প্রচারে আদৌ কোনও কাজ হচ্ছে কি? যেমন, অনিন্দিতাদেবী দীর্ঘদিনের লাইসেন্সধারী হয়েও গাড়ি চালানোয় সড়গড় ছিলেন না। তবু কসবা রা়জডাঙার মতো এলাকায় সকাল সওয়া আটটা নাগাদ গাড়ি চালানো শিখতে বেরিয়ে ঠিক করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। লালবাজারের একটি সূত্রের মতে, ওই মহিলার লাইসেন্স রয়েছে। তাই আইনত তিনি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর অধিকারী। কিন্তু সেই অধিকার কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত? ওই সূত্রের দাবি, কী ভাবে স্টিয়ারিংয়ে হাত না পাকিয়েও পরিবহণ দফতর থেকে লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা হোক। কঠোর করা হোক লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষাও।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, আগে বিভিন্ন মোটর ট্রেনিং স্কুলের বদান্যতায় ইচ্ছেমতো লাইসেন্স মিলত। বহু ক্ষেত্রে পরীক্ষা হত নামেই। কিন্তু বর্তমানে লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটি পরীক্ষার ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হচ্ছে। দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘নন-ট্রান্সপোর্ট’, অর্থাৎ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না, এমন লাইসেন্সেই গরমিল বেশি। কারণ, পেশাদার গাড়িচালকদের তিন বছর অন্তর লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হয়। কিন্তু অন্যদের ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তার প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু শহরে লাগাতার দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে পরিবহণ দফতর এই লাইসেন্স নবীকরণের নিয়মে বদল আনবে কি?
প্রশ্নটা জোরালো হচ্ছে।