অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তের খোঁজে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু সিঁথি থানার পুলিশ এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই অভিযোগকারিণীকে। যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার দুপুরে দমদমের বাড়ি থেকে স্নেহময় দে (৬২) নামে এক বৃদ্ধকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে থানার ভিতরেই মারা যান তিনি।
পুলিশ জানায়, অভিযোগকারিণীর ঠিকানা ভুয়ো, ফোন বন্ধ। যে ঠিকানার প্রমাণ দিয়ে মোবাইলের সংযোগ নেওয়া হয়েছিল সেখানেও খোঁজ মেলেনি তাঁর। থানার সিসিটিভি ফুটেজে স্নেহময়বাবুর হাজিরার ছবি ধরা পড়েছে। বৃদ্ধ যে অসুস্থ ও তাঁর হাঁটাচলা করতে সমস্যা রয়েছে, দেখা গিয়েছে তা-ও। কিন্তু আচমকা এক মহিলার অভিযোগ পেয়েই এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে পুলিশ এত ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠল কেন? সদুত্তর মেলেনি।
গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে সিঁথি থানার ভূমিকা নিয়ে। এর পরেও থানার বিরুদ্ধে লালবাজারের কর্তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। রবিবার ঘটনার পরেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্নেহময়বাবুর পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মিথ্যা অভিযোগের পরে পুলিশের মানসিক উৎপীড়ন সহ্য করতে পারেননি বৃদ্ধ। থানার ভূমিকা সেই অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে। পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ সব কথা বেরিয়ে আসার পরে কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’ সিঁথি থানা। অভিযোগ জানানোর সময়ে ওই মহিলার সঙ্গে কারা এসেছিলেন, সিসিটিভি দেখে তা বুঝতে চাইছে তারা।
সিঁথি থানার ভূমিকা নিয়ে যদি প্রশ্নই ওঠে ও লালবাজারের চোখে যদি তা ধরাও পড়ে, তা হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, থানার ভিতরে বৃদ্ধের মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টা পরেও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি! সদুত্তর মেলেনি ডিসি (উত্তর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের কাছে। সোমবার তাঁর জবাব, ‘‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট তো আগে হাতে পাই।’’ অর্থাৎ সরকারি ভাবে এখনও থানার পাশেই রয়েছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজারের খবর, এ দিন ক্রাইম কনফারেন্সেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। বরং প্রশ্নের মুখে পড়া পুলিশ অফিসারদের স্বপদে বহাল রেখেই ধন্দের নিরসন করতে চাইছেন বাহিনীর কর্তারা।
আরও পড়ুন:
দিল্লির দূষণে বিপদের আঁচ পেয়েছে কলকাতা
পুলিশ জানায়, নিঃসন্তান স্নেহময়বাবু দমদমের কালীচরণ শেঠ লেনের পৈতৃক বাড়িতে স্ত্রী শিপ্রার সঙ্গে থাকতেন। সেখানে তাঁর ভাই চঞ্চল দে-র বিউটি পার্লার রয়েছে। বাড়ি নিয়ে সম্পত্তিগত বিবাদও রয়েছে। রবিবার দুপুরে এক মহিলা গিয়ে সিঁথি থানায় অভিযোগ জানান, বাড়ির চৌহদ্দিতেই স্নেহময়বাবু তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। এর পরেই পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধকে থানায় নিয়ে যান। স্নেহময়বাবুর এক ভাই সুধাংশু দে জানান, থানায় এক মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর জিজ্ঞাসাবাদের নামে স্নেহময়বাবুকে অপমান করতে থাকেন। তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আরজিকরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সুধাংশুবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওই মহিলা সাব-ইনস্পেক্টরের জন্যই দাদা মারা গিয়েছেন।’’ পুলিশের একাংশের বক্তব্য, সিঁথি থানার ওসি এর দায় এড়াতে পারেন না। এ দিন স্নেহময়বাবুর বাড়ি যান মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সদস্যেরা। মৃতের স্ত্রী-পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেলে থানায় যান।
সোমবার স্নেহময়বাবুর পরিবারের তরফে ওই মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর, চঞ্চল দত্ত, অভিযোগকারিণী-সহ মোট চার জনকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ জমা পড়লেও রাত পর্যন্ত পুলিশ মামলা দায়ের করেনি।