বাঁ দিকে মৃতের দিদি। ডান দিকে কাপড়ে মোড়া ভাইয়ের কঙ্কালসার দেহ। নিজস্ব ছবি
রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার ভবানীপুরে। ভাইয়ের মৃত্যুর পর, তাঁর দেহ কয়েক দিন ধরে আগলে রাখার অভিযোগ উঠল দিদির বিরুদ্ধে। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে খবর পেয়ে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ এসে ভবানীপুরের মাধব চ্যাটার্জি লেনের বাড়ি থেকে শান্তনু দে (৪৮)-র দেহ উদ্ধার করে। মৃতের দিদি মহাশ্বেতা দেএখনও ওই ফ্ল্যাটেই রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি শান্তনুবাবুরশেষকৃত্যের বিষয়টি নিয়েও তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন তিন-চার আগে মহাশ্বেতাদেবী ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকারের কাছে কিছু চাল-ডাল চান। কেয়ারটেকার সেই সামগ্রী কিনে নিয়ে মহাশ্বেতাদেবীর ফ্ল্যাটে দিতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি কটূ গন্ধ পান। এ নিয়ে মহাশ্বেতাদেবীকে জিজ্ঞাসাও করেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি এড়িয়ে যান ওই মহিলা। এর পর কেয়ারটেকার স্থানীয় কাউন্সিলর অসীম বসুকে বিষয়টি জানান। তিনি বিষয়টি নজরে রাখতে বলেন। ওই কেয়ারটেকারের দাবি, গত কয়েক দিন ধরে গন্ধটা আরও বাড়তে থাকে। অসীমবাবুকে ফের ফোন করে বিষয়টি জানালে, তিনি কেয়ারটেকারকে তাঁর কাছ থেকে এক মাসের মতো চাল-ডাল নিয়ে মহাশ্বেতাদেবীদের ফ্ল্যাটে দিয়ে আসতে বলেন।
সেই মতো শুক্রবার রাতে অসীমবাবুর কাছ থেকে চাল-ডাল নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যান কেয়ারটেকার। মহাশ্বেতাদেবী দরজা খুলতেই তীব্র পচা গন্ধ আসতে থাকে। কেয়ারটেকার তখন জানতে চান, কিসের গন্ধ? মহীশ্বেতাদেবী তখন দরজা বন্ধ করে দেন। এর পর কেয়ারটেকার প্রতিবেশীদের খবর দেন। সকলে মিলে এর পর জোর করে শান্তনুবাবুদের ফ্ল্যাটে ঢোকেন। দেখা যায়, পাশের ঘরে পড়ে রয়েছে একটি কঙ্কালসার দেহ। এর পর কেয়ারটেকার খবর দেন অসীমবাবুকে। তিনি ভবানীপুর থানায় যোগাযোগ করেন। রাতেই পুলিশ এসে ওই দেহ নিয়ে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে। আপাতত সেখানকার মর্গেই রয়েছে তাঁর দেহ।
আরও পড়ুন: লেবু, আপেলে থুতু লাগাচ্ছেন বিক্রেতা, ভাইরাল ভিডিয়ো কার এবং কবেকার জেনে রাখুন
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১এ ঠিকানায় আগে শান্তনুবাবুদের বাড়ি ছিল। পরে তাঁর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সেই বাড়ি-জমি এক প্রোমোটারকে দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই তৈরি হয় ফ্ল্যাট। চুক্তি মতো একটি ফ্ল্যাট তাঁরাও পান। সেখানেই অবিবাহিত দুই ভাই-বোন থাকতেন। তাঁরা খুব একটা কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। ঘর থেকে বাইরেও বেরোতেন কম। সম্প্রতি তাঁরা আর্থিক কোনও অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মানসিক ভাবেও মহাশ্বেতাদেবী সুস্থ কি না দেখা হচ্ছে তা-ও।
আরও পড়ুন: মোদীর দীপাবলিতে লোডশেডিং থাকবে উত্তরপ্রদেশে, গ্রিড-উদ্বেগ সারা দেশে
ভবানীপুরের এ দিনের কথা জানাজানি হতেই, এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।লালবাজারের হোমিসাইট বিভাগও ঘটনাস্থলে গিয়েছে।এ দিনের ঘটনা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ২০১৫-র জুন মাসে শেক্সপিয়র সরণি থানার রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনার কথা।এলাকার একটি ফ্ল্যাটেরশৌচাগারের বাথটব থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক বৃদ্ধের দেহ। পরে বাকিদের উদ্ধার হয়থেকে এক মহিলা এবং দু’টি পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল। ওই ঘটনায় জানা গিয়েছিল, মহিলার ভাই ওই সব কঙ্কাল আগলে রাখছিলেন। তা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্য জুড়ে।