নয়াদিল্লি ও কলকাতা: অবশেষে জট কাটার ইঙ্গিত মিলল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধার।
শেষমেশ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রেল মন্ত্রকের সুপারিশ মেনে প্রাচীন সৌধ সংলগ্ন এলাকায় খনন সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনে শিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এতে যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হল, এমনটা নয়। তবে জট কাটার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সূত্রের খবর, সংসদের পরবর্তী বাদল অধিবেশনে সংশোধনীটি পাশ করানো হবে। তার পরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বিবাদী বাগ অঞ্চলে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে আর কোনও বাধা থাকবে না।
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এনশিয়েন্ট মন্যুমেন্ট অ্যান্ড আর্কিওলজিক্যাল সাইট অ্যান্ড রিমেন্স অ্যাক্ট’-এ সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত ওই আইনে ছিল, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রাচীন সৌধের একশো মিটারের মধ্যে কোনও রকম খননকাজ চালানোই যাবে না। একশো থেকে দুশো মিটারের মধ্যে খনন করতে গেলে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অনুমোদন নিতে হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে এসপ্ল্যানেড থেকে বিবাদী বাগ হয়ে হাওড়া যাওয়ার পথে একশো মিটারের মধ্যে তিনটি এ রকম প্রাচীন সৌধ পড়ে গিয়েছিল। একটি কারেন্সি বিল্ডিং এবং অন্য দু’টি ইহুদিদের দু’টি প্রাচীন সিনাগগ বা প্রার্থনাগৃহ।
আইনের ওই বাধার কথা জানার পরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার কেন্দ্রীয় সরকারের রেল মন্ত্রকের কাছে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। রেল মন্ত্রক বিষয়টি জানায় সংস্কৃতি মন্ত্রককে। পরে দিল্লিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল মন্যুমেন্ট অথরিটির সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই ওই আইন সংশোধনের জন্য আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকও। শেষমেশ বিভিন্ন মহলের আবেদনে সাড়া দিয়ে আইন সংশোধনে সম্মত হয় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির স্বস্তি মরীচিকা, চলবে ভ্যাপসা গরম
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জানিয়েছে, সড়ক তৈরি বা রেললাইন পাতার মতো জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, এমন কাজের কথা চিন্তা করেই ওই সংশোধনী আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে এ ধাঁচের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় খননকাজ করতে পারবে নির্মাণকারী সংস্থা।’’
তবে প্রাচীন সৌধ সংক্রান্ত বাধা কাটলেও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বিবাদী বাগ এলাকায় সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে যাবতীয় বাধা কেটে গেল, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখনও ওই রুটে বিবাদী বাগ এলাকায় বেশ কয়েকটি বস্তি উচ্ছেদ করা নিয়ে নতুন করে জট তৈরি হয়েছে। তার মধ্যেই এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা ‘অ্যাফকন’-এর দায়ের করা মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এ দিন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে। আগামী ১৯ মে, মামলার পরবর্তী শুনানির দিন বিচারপতি দত্তের আদালতে কৌশিকবাবু জানাবেন, ওই প্রকল্পে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে বাধা কী ভাবে কাটবে।