বে-হুঁশ: প্রতিমা বিসর্জনে সঙ্গে যাওয়া মহিলা ও খুদেদের কারও মুখে মাস্কের বালাই নেই। রবিবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বিসর্জনের তৃতীয় দিনে ‘ভিলেন’ হয়ে রইল সেই বৃষ্টিই!
ফলে শহরের চার হাজার দুর্গাপ্রতিমার মধ্যে নিরঞ্জনের প্রতীক্ষায় এখনও হাজারখানেকের বেশি। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, দশমী ও একাদশীর দিন সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত মেঘ-বৃষ্টির খেলায় প্রতিমাকে গঙ্গামুখী হতে কমই দেখা গিয়েছে। যে সব প্রতিমা নিরঞ্জনে এসেছিল, তাদের দেখা গেল বিদায়বেলায় সযত্নে প্লাস্টিকে মুড়ে থাকতে।
এ দিন বিকেল গড়িয়ে রাত যত বেড়েছে, প্রতিমা বিসর্জনে শহরের বিভিন্ন ঘাটের ভিড় তত বাড়তে দেখা গিয়েছে। একাদশীতেই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল রবিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার। যা আজ, সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলতে পারে। সম্ভবত সেই কারণেই সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির বেগ কিছুটা ধরতে রাতারাতি প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য ঘাটের পথে পা বাড়াল বেশির ভাগ পুজো কমিটি।
তবে শনিবারের পরে এ দিনও ব্রাত্য হয়ে রইল দইঘাটের পরিবেশবান্ধব বিসর্জন ব্যবস্থা। এ দিনও কোনও পুজো কমিটি এগিয়ে আসেনি বলেই পুরসভা সূত্রের খবর। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলছেন, ‘‘দশমীর দিনে পরীক্ষামূলক ভাবে ন’টি প্রতিমাকে গঙ্গার পাড়ে হোসপাইপের মাধ্যমে জল দিয়ে গলানো হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশবান্ধব ওই বিসর্জন পদ্ধতি অনুসরণ করতে শনি ও রবিবার একটিও পুজো কমিটি এগিয়ে আসেনি।’’ তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘এ বছরই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে বিশেষ এই বিসর্জন-ব্যবস্থা চালু হয়েছে। গঙ্গাদূষণ রোধে সমস্ত পুজো কমিটি যাতে এই ব্যবস্থা মেনে চলে, সে জন্য আগামী দিনে পুরসভা প্রচারেরও ব্যবস্থা করবে।’’
গত দু’দিনের মতো এ দিনও গঙ্গার ১৭টি ঘাট ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ৩৩টি জলাশয়ে বিসর্জনের যাবতীয় ব্যবস্থা ছিল। কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের পর্যাপ্ত কর্মী বিসর্জনের তদারকির কাজ করেছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, গঙ্গার পাড়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পুজোর সামগ্রী, ফুলমালা পুরসভার কর্মীরা সংগ্রহ করে গাড়িতে তুলছিলেন। ক্রেনের মাধ্যমে কাঠামো গঙ্গা থেকে তুলে ধাপার মাঠে ফেলে আসার ব্যবস্থাও করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এ দিন বিকেলে বাজেকদমতলা ঘাট পরিদর্শনে যান দেবাশিস কুমার। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফেও বাজেকদমতলা ঘাট, নিমতলা ঘাট এবং জাজেস ঘাটে সুষ্ঠু ভাবে বিসর্জনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ক্রেন, মেকানাইজড নৌকা ছাড়াও তাঁদের পর্যাপ্ত কর্মী গঙ্গার তিনটি ঘাটেই রয়েছেন। কাঠামো সরাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মীরাও পুরকর্মীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বাজেকদমতলা, নিমতলা এবং জাজেস ঘাটে বিসর্জনের পরে গঙ্গা থেকে কাঠামো এবং পুজোর সামগ্রী দ্রুত সরানো হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুরসভা যৌথ ভাবে কাজ করায় সেটা সম্ভব হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, বিসর্জনের সময়ে আগামী দিনেও শহরের সমস্ত ঘাট সাফাইয়ে তাঁরা পুরসভার সঙ্গে হাত মেলালে খুব ভাল হয়।’’