করোনা-পর্বেও যেটুকু মুম্বইয়ের তারকা আনা গিয়েছিল, এ বার সেটাও হচ্ছে না বলে দাবি। ফাইল ছবি
‘‘উদ্বোধন হবে, অথচ মুম্বইয়ের কাউকে লাগবে না? ছোট করে কাউকে করে দিই। আচ্ছা, গানের অনুষ্ঠানে অন্তত...!’’ কলকাতায় বাইরের তারকাদের আনার ক্ষেত্রে যাঁরা যোগাযোগ এবং মধ্যস্থতার কাজ করেন, তাঁদেরই এক জনকে বরাত পেতে ফোনে এমনই অনুনয়-বিনয় করতে দেখা গেল। এর পরে ফোন নামিয়ে বললেন, ‘‘সকলেরই এক ভয়, নজরে পড়ে যেতে পারি। এ বারটা থাক। এই ভয়েই কি এ বারের পুজো তারা-হারা হয়ে থাকবে?’’
যাঁদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন, স্পষ্ট উত্তর নেই তাঁদের কাছেও। সকলেই জানালেন অদ্ভুত রকমের ‘কঠিন পরিস্থিতি’র কথা। পুজোর পঞ্চমী পেরিয়ে গেলেও মুম্বইয়ের কোনও তারকাকে আনারই বরাত পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি। মিলছে না অপেক্ষাকৃত কম দরের বাইরের শিল্পীর বরাতও। করোনা-পর্বেও যেটুকু মুম্বইয়ের তারকা আনা গিয়েছিল, এ বার সেটাও হচ্ছে না বলে দাবি তাঁদের। পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকে কথা শুরু হওয়ার সময়ে অনেক উদ্যোক্তা জানিয়েছিলেন, কয়েক দিন কাটুক, তার পরে পাকা কথা বলা হবে। এখন তাঁরাই বলছেন, পরের বার হবে।
বহু পুজোর দীর্ঘদিনের তারকা মধ্যস্থতাকারী তোচন ঘোষ যেমন বললেন, ‘‘একটাও বাইরের শিল্পীর বরাত আসেনি। সকলেই বলছেন, এ বার বাড়াবাড়ি কিছু করলে ইডি, সিবিআইয়ের নজরে পড়ে যেতে পারি। এ-ও খবর পেলাম, বাহুল্যবর্জিত পুজো করার নাকি নির্দেশ রয়েছে।’’ তোচন জানালেন, কোনও কোনও বছর এক-এক জন তারকা খুব ওঠেন। এখন যেমন সব থেকে বেশি বাজার পুষ্পার। কিন্তু পুষ্পার নাম করেও বরাত মেলেনি। তিনি আরও জানান, উঠতি শিল্পী ছাড়াও শিল্পা শেঠি কুন্দ্রা বা সোনাক্ষী সিংহদের বাজার সব সময়ে থাকে। ২৫-৩০ লক্ষ টাকা দিতে পারলেই তাঁদের আনা যায়। তবে সলমন খান, সঞ্জয় দত্ত বা দুই রণবীরের রেট অনেক বেশি— ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা। এখন আবার হাসির অনুষ্ঠানের পার্শ্বচরিত্রদের আনার রেওয়াজ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পাঁচ-সাত লক্ষ টাকায় হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি পুজোয় ঘুরিয়ে দিলে টাকাও উঠে যায়, একটি কমিটির উপরে চাপও পড়ে না। কিন্তু এ বার কিছু লাভ হচ্ছে না বলে তোচনের দাবি।
পুজোয় তারকা আনার প্রতিযোগিতায় বরাবরই এগিয়ে থাকে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। ক্রীড়া তারকাদের এনেও চমক দেয় তারা। তাদের সঙ্গে লড়াই চলে সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী বা নকতলা উদয়ন সঙ্ঘের। এ বার কারও সঙ্গেই তেমন তারকা-যোগের খবর নেই। ব্যতিক্রম শুধু, শ্রীভূমির পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে গায়ক শানের উপস্থিতি। আর এক তারকা মধ্যস্থতাকারী বাবুয়া ভৌমিক বললেন, ‘‘যা জানি, তাতে ওটা হয়েছে অন্য হিসাবে। শান দেবের ছবির গানের কাজে এসেছিলেন। দেব এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব যোগাযোগে পরে শ্রীভূমিতে যান। সিনেমার প্রচারের জন্য দেবও সেখানে গিয়েছিলেন।’’ বাবুয়া বললেন, ‘‘রাখি সাওয়ান্ত বা এই রকম কয়েক জনকে দিয়ে চেষ্টা করিয়েও লাভ হয়নি। অনেকে আবার অনুষ্ঠান করতে এসে গায়ক কে কে-র মৃত্যুর পরে কলকাতার ব্যবস্থাপনার প্রশ্ন তুলছিলেন। কিন্তু তারকারা কী বলবেন, তাঁদের আনার মতো টাকাই তো বার করতে দেখছি না কাউকে।’’