নেতা-মন্ত্রীদের পুজোর রমরমাই এখনও শেষ কথা বলে চলেছে। ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজোকে বিশ্ব-মানচিত্রে পৌঁছতে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এগিয়ে দেবে বলে আশা মিললেও নেতা-মন্ত্রীদের পুজোর রমরমাই এখনও শেষ কথা বলে চলেছে। মহালয়ার আগে তিন দিনের প্রাক্-পুজো প্রদর্শনীর শেষে এমনটাই মনে হচ্ছে কোনও কোনও পুজো উদ্যোক্তার। তবে অতি স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খোলাও এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
ঠিক হয়েছিল, ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর— ‘দুর্গাপূজা আর্ট প্রিভিউ শো’-এ কয়েক জন বাছাই অতিথি কিউআর কোড দেখিয়ে শহরের বাছাই করা ২২টি পুজো মণ্ডপে যাবেন। সেই সঙ্গে শোভাবাজার রাজবাড়ি, জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ির মতো দু’টি পুরনো বনেদি বাড়ির পুজো এবং বাগবাজার ও বালিগঞ্জ কালচারালের মতো দু’টি সাবেক ধারার বারোয়ারি পুজোকেও ওই বাছাই তালিকায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানত যাঁদের উপস্থিতির আশায় এত উদ্দীপনা, সেই ইউনেস্কো-কর্তারা দু’দিনে আটটির বেশি পুজো দেখে উঠতে পারেননি।
প্রথম দিন, বৃহস্পতিবার ইউনেস্কোর কর্তাদের উপস্থিতিতে টাউন হলে পুজো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর সূচনা হয়। এর পরে টালা প্রত্যয়ের মাঠে প্রিভিউ শোয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। ভারতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এরিক ফল্ট এর পরে যান বাগুইআটির অর্জুনপুর আমরা সবাইয়ের মণ্ডপে। সেখান থেকে তাঁকে সটান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী এবং অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিভিউ শোয়ের উদ্যোক্তাদের দাবি, ক্লান্তির জন্য সে দিন এর পরে তিনি আর কোনও মণ্ডপে যেতেই পারেননি। পরের দিন, শুক্রবার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের সঙ্গে উৎসব-অর্থনীতি বিষয়ক বৈঠকে ছিলেন এরিক। সে দিন তিনি যান দক্ষিণ কলকাতারই চারটি মণ্ডপে। এর মধ্যে ছিল বালিগঞ্জ কালচারালের মণ্ডপ। এ ছাড়া, বিধায়ক দেবাশিস কুমারের ত্রিধারা, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হিন্দুস্থান ক্লাব এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাট মিলন সঙ্ঘে যান তাঁরা। উদ্যোক্তাদের দাবি, এতেই ইউনেস্কোর কর্তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে বাকি মণ্ডপে আর তাঁদের যাওয়া হয়নি।
কিন্তু বেছে বেছে বেশির ভাগ মন্ত্রীদের পুজোই কেন তাঁদের দেখানো হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘ইউনেস্কো না-এলেও ব্রিটিশ হাইকমিশন বা ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনেকে পুজোয় এসেছেন।’’ উত্তর কলকাতার এক পুজোকর্তা বললেন, ‘‘আমাদের বলা হয়, যানজটের জন্য ইউনেস্কো আসতে পারেনি। তবে অন্য কিছু বিদেশি অতিথিরা এসেছিলেন। গণ্যমান্যদের কথা জানি না, শেষ কথা কিন্তু মানুষের ভিড়ই বলবে!’’ ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের কর্তা শাশ্বত বসু বলছেন, ‘‘পর্যটন দফতরের উদ্যোগে বিদেশি অতিথিরা আবার আসবেন। হতাশার কিছু নেই।’’