নির্মীয়মাণ: কাজ চলছে কালীঘাট স্কাইওয়াকের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরি।
নানা জট কাটিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কালীঘাট স্কাইওয়াকের কাজ শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। কালীঘাট স্কাইওয়াকের কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, স্কাইওয়াক নির্মাণকারী সংস্থাকে প্রয়োজনে সরিয়ে পূর্ত দফতরকে দিয়ে বাকি কাজ করানো হোক। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি স্কাইওয়াক নির্মাণে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম। গত মে মাসে নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একাধিক সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্কাইওয়াক নির্মাণকারী সংস্থাকে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পূর্ত দফতরের নজরদারিতে স্কাইওয়াকের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ১৫ দিন পর পর রিভিউ বৈঠকও হচ্ছে।
তবে সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কাজের যা অগ্রগতি, তাতে এই নতুন সময়সীমাও রক্ষা হবে কি না, রয়েছে সেই আশঙ্কা। তার উপরে সামনেই বর্ষা। প্রশ্ন উঠেছে, বর্ষার মধ্যে কাজ শেষ হবে তো? কারণ স্কাইওয়াকের কাজ করতে গিয়ে মাস চারেক আগে প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা ও তিন মিটারের বেশি চওড়া বিশালাকার ইটের তৈরি বহু পুরনো একটি নিকাশি নালা ফেটে যায়। বর্তমানে ওই নিকাশি নালার পাইলিংয়ের কাজ করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, কর্মীদের। সম্প্রতি নবান্নে রিভিউ বৈঠকে পূর্ত দফতরের সচিব অন্তরা আচার্য ওই ফেটে যাওয়া নিকাশি নালার জায়গায় পাইলিংয়ের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চান। নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা আশ্বাস দেন, তাঁরা চলতি মাসেই ফেটে যাওয়া নিকাশি নালার যাবতীয় পাইলিং শেষ করতে পারবেন।
দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের কাজ শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটে স্কাইওয়াক তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ১০ মিটার চওড়া স্কাইওয়াক তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। স্কাইওয়াকের একটি দিক কালীঘাট মন্দির থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের দিকে যাবে। আর একটি দিক কালীঘাট থানার পাশ দিয়ে গুরুপদ হালদার রোডের দিকে নামবে।
গত দেড় বছরে স্কাইওয়াকের কাজ করতে গিয়ে প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের। মূলত কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকা অত্যন্ত ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি মাটির নীচে ব্রিটিশ আমলের একাধিক জল ও নিকাশি লাইন যাওয়ায় বার বার কাজ করতে গিয়ে পাইপ লাইনে ফাটল দেখা দিয়েছে। জলের লাইনে ফাটল দেখা দেওয়ায় মাস কয়েক আগে পুরসভা থেকে পানীয় জলের গাড়ি আনিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের জল সরবরাহ করতে হয়েছিল।
কালীঘাট স্কাইওয়াক নির্মাণের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রতনকুমার দাস বলেন, ‘‘নবান্নে সরকারি শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশ মতো ২৪ ঘণ্টা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আমরা স্কাইওয়াক নির্মাণের কাজ করছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারব।’’ যদিও বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলে নির্দিষ্ট সময়ে স্কাইওয়াকের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।