হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মায়ের সঙ্গে আব্দুল কালাম। নিজস্ব চিত্র।
জন্মের পরে চার মাস বয়স থেকেই বার বার সংক্রমণ হত তার। নিউমোনিয়ায় একাধিক বারভুগেছে সে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে ওই বালকের ফুসফুস। চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য জরুরি ছিল জিন থেরাপি বা স্টেম সেল প্রতিস্থাপন। কিন্তু আর্থিক কারণে তা সম্ভব নয় পরিবারের পক্ষে। বেঁচে থাকতে তাই ওষুধের পাশাপাশি তারসঙ্গী হয়ে গিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারও।
বিহারের জামুরের বাসিন্দা, দশ বছরের ওই বালকের নামআব্দুল কালাম। বাবা পেশায় শ্রমিক। এক বোন এবং দিদি রয়েছে আব্দুলের। চার মাস বয়স থেকে বার বার শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে হয়েছে তাকে। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়েও যাওয়া হত তাকে।অতিমারির সময়ে দেশজোড়া লকডাউন চলাকালীন তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। সে বারও স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে।
করোনা পরিস্থিতিস্বাভাবিক হতেই কলকাতায় নিয়ে আসা হয় তাকে। পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় আব্দুলের। বুকের সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, গুরুতর ব্রঙ্কিয়েকটেসিস রোগেরশিকার সে। ওই রোগে শ্বাসনালি অস্বাভাবিক প্রশস্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে বার বার ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ার ফলেই আব্দুলের এমন হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে বালকটির চিকিৎসায় ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ডহেলথ’ তাদের নিজস্ব যাবতীয় খরচ মকুব করে। চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ। সংক্রমণ দমনেমানব শরীরের মূল রক্ষী লিম্ফোসাইট শ্বেত রক্তকণিকার উপস্থিতি আব্দুলের শরীরে খুব কম ছিল। এরকারণ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে জানা যায়, লিম্ফোসাইটের উৎপাদক সিডি ৪-এর উপস্থিতিও তার শরীরে কম। এই দুইয়ের অপর্যাপ্ততাই আব্দুলের দেহে বার বার সংক্রমণের অন্যতম কারণ।রোগের কারণে বাতাস থেকে ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ এবং শরীরের কোষে কোষে তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতাও হ্রাসপেয়েছে। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় হাইপক্সিয়া।
চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, ‘‘বাচ্চাটি প্রাইমারিইমিউনো ডেফিশিয়েন্সির শিকার। একে বলে সিডি-৪ লিম্ফোসাইটোপিনিয়া। এটি জন্মগত সমস্যা। রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে অক্সিজেন থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয়েছে। দেখা হবে, ওষুধে কেমন সাড়া দিচ্ছে আব্দুল।’’
পার্ক সার্কাসের ওই হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষবলেন, “পরিবারটির আর্থিক অবস্থার কথা ভেবেই ওকে হাসপাতালেরতরফে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। কারণ ছেলেটি অক্সিজেন ছাড়া থাকতেই পারছে না।আমাদের হাতে শিশুটিকে বাঁচানোর এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।’’
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষরোগেরশিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ দত্তচৌধুরীর মতে, ‘‘বড়দের ব্রঙ্কিয়েকটেসিসের সমস্যা শোনা যায়। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বিরল। জিনঘটিত হলেও রোগ যদি আগে ধরা পড়ত, নিশ্চয়ই এত খারাপ অবস্থা হত না। তবে দেরিতে ধরা পড়লেও যে মানবিকতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা প্রশংসনীয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।