জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বছর জুনিয়র চিকিৎসককে নিগ্রহের ঘটনার পরে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। জুনিয়র তো বটেই, সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশও নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে একযোগে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। এক বছর পরে সেই ঘটনার তদন্তেরই চার্জশিট তৈরি করতে নাজেহাল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, এক বছরে একাধিক বার নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও কোনও চিকিৎসক সাক্ষ্য দিতে আসেননি। যার জেরে ঘটনার তদন্ত কার্যত বিশ বাঁও জলে।
গত বছর ১২ জুন বিকেলে বছর ৭৫-এর মহম্মদ সইদ নামে এক রোগীকে নিয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন তাঁর কয়েক জন আত্মীয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে আসা লোকজন রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসকদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় পরিবহ মুখোপাধ্যায় এবং যশ টেকওয়ানি নামে দুই জুনিয়র চিকিৎসক জখম হন বলে অভিযোগ। দু’জনেরই মাথায় চোট লাগলেও পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের আঘাত গুরুতর ছিল বলে জানানো হয়। তাঁকে মল্লিকবাজারের একটি স্নায়ুরোগ চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি ছিল, চিকিৎসক নিগ্রহ বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে পুলিশকে। এনআরএস-এর চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের একের পর এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। শেষে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন: ট্রেন বন্ধে কর্মচ্যুত ‘বহিরাগতেরা’
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় দু’টি অভিযোগ জমা পড়ে। জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে তাঁদের মারধরের অভিযোগ করা হয়। চিকিৎসকদের আনা অভিযোগ প্রথমে শুধু মারধর হিসেবে রুজু করা হলেও পরে তা সংশোধন করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ নম্বর ধারা যোগ করা হয়। এই মামলায় সাত জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। তবে জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না।
যদিও এ বিষয়ে পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের তরফ থেকে বয়ান দেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্তদের শনাক্তকরণের জন্য পরিবহ মুখোপাধ্যায়, যশ টেকওয়ানি-সহ সাত-আট জন চিকিৎসককে বারবার নোটিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনও বারই হাজির হননি ওই চিকিৎসকেরা। আর তার জেরেই চার্জশিট জমা করা যায়নি বলে পুলিশের দাবি।
মৃত মহম্মদ সইদের পরিবারের তরফে ওই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছিল। সেই মামলাতেও এখনও পর্যন্ত চার্জশিট জমা পড়েনি। ওই মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ জানিয়েছে, সাধারণত রোগী-মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ আনলে সেটি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগটি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও রিপোর্ট আসেনি বলে দ্বিতীয় মামলাতেও চার্জশিট জমা করা যায়নি।
পরিবহের সেই ঘটনার পরে জুনিয়র চিকিৎসকেরা ‘সেভ দ্য সেভিয়ার্স’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। অভিযোগ, সেই সংগঠনের সদস্য-চিকিৎসকেরা মামলায় পুলিশকে সাহায্য করছেন না। সংগঠনের অন্যতম সদস্য অনির্বাণ নাথ বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে এ সব নিয়ে ভাবারই সময় পাইনি। এ বার মনে পড়ল।’’