আর জি কর ঘটনার প্রতিবাদে কফি হাউজের ভেতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ। ছবি: রনজিৎ নন্দী।
আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে সরব গোটা রাজ্য। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির শেষে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। রাস্তা আটকালে সবার অসুবিধা হয়।’’ এ দিন মমতা ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘‘কথা বলতে চাইলে জানানো হোক। কারও বিরুদ্ধে কেস দিইনি বলে সেটাকে দুর্বলতা ভাববেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধেই এ দিন সরব হয়েছেন শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া বিস্ময় মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমাদের বোনের অশৌচ চলছে, তার মধ্যেই উৎসবে আছি। জনজাগরণের উৎসবে আছি। তিলোত্তমার সুবিচারের দাবির উৎসবে আছি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সিন্ডিকেট-রাজের বলির উৎসবে আছি। খুনি ধর্ষকদের ফাঁসির উৎসবে আছি। প্রমাণ লোপাটকারীদের শাস্তির উৎসবে আছি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আমরা ভীষণ ব্যথিত ও অপমানিত বোধ করছি।’’ অর্থোপেডিক বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া স্বর্ণাভ নন্দীর প্রশ্ন, ‘‘এখন উৎসবে শামিল হওয়ার সময়? কী কথা বললেন মাননীয়া!’’ এ দিনের সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শুনে রীতিমতো আশাহত এসএসকেএমের ইন্টার্ন উৎসব দত্ত। তাঁর মতে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রকৃত বিচারের দাবিতে এই আন্দোলন চলছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের শুনানিতে সেই মূল বিষয়টিই উঠে এল না। উল্টে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে ফিরতে বলা হল। কিন্তু হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়ে ডাক্তারদের দাবিদাওয়া কি বাস্তবায়িত হয়েছে? সেই প্রশ্ন তুলছেন উৎসব। আর এক ইন্টার্ন শমীককুমার সাহুর কথায়, ‘‘অনেক ভাল ব্যবহার নিয়ে আমরা আমাদের দিদির ধর্ষণ ও খুনের বিচার চাইছি। অথচ উনি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাদের অপমান করলেন।’’
এসএসকেএমের ইন্টার্ন পড়ুয়া তুহিনা পরভিনের ক্ষোভ, ‘‘মানবিকতা থাকলে কেউ এ রকম মন্তব্য করতে পারেন?’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন পড়ুয়া ঋত্বিক দেব আবার সাফ জানাচ্ছেন, কী ভাবে জন-আন্দোলনকে বিচ্যুত করা যায়, সেটাই এখন প্রশাসন চাইছে। কিন্তু সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া কুমুদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা হয়ে এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে পুজো, উৎসবে শামিল হতে বলছেন? এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ মেডিক্যালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক সুমিতা পাণ্ডেরও স্পষ্ট কথা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা এক ধরনের হুমকি ছাড়া কিছু নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া নাদিম হাসান। সেখানকারই ইন্টার্ন পড়ুয়া দেববাণী পাত্রের কথায়, ‘‘পুজো হোক। কিন্তু উৎসব নয়। এ দিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে বলা হল, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩ জন রোগী মারা গিয়েছেন। এর প্রমাণ কোথায়? আমরা চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করিনি। রোগীদের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় অভয়া ক্লিনিক চলছে।’’ আর এক ইন্টার্ন পড়ুয়া দীপন কৌসরের সাফ কথা, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কারও উৎসবে শামিল হওয়ার মানসিকতা নেই।’’