এ দিন গৌরব বলেন, ‘‘পাপ্পুকে এতটাই ভালবাসতাম যে, গত পুজোয় জামা কিনে দিয়েছিলাম। ওঁর মৃত্যুতে আমিও শোকস্তব্ধ। আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ওঁর পরিজনদের বোঝানোর মতো কেউ নেই।
ফাইল চিত্র।
ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু এখনও নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন না নিমতার বাসিন্দা, চিকিৎসক গৌরব রায়। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে এখনও কিছুটা আতঙ্ক তো রয়েছেই। বাড়িতে থাকতেও ভয় হচ্ছে।’’
গত ১৪ এপ্রিল সকালে নিমতা বাজার এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁচিশের যুবক পাপ্পু কুণ্ডুর আচমকাই বুকে ব্যথা শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে হাসপাতাল যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের পরিজন ও প্রতিবেশীরা অভিযোগ তোলেন, বার বার ডাকা হলেও যাননি গৌরব। এর পরেই উত্তেজিত জনতা ওই চিকিৎসকের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে। গৌরব-সহ তাঁর পরিজনদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
হামলার ঘটনায় পুলিশের কাছে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই চিকিৎসক। যদিও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। অন্য দিকে, পাপ্পুর পরিজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৩০৪-এ ধারায় (অবহেলাজনিত কাজের দ্বারা মৃত্যু ঘটানো) মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। কেন এক জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন ধারায় মামলা দায়ের হবে, তিনি কেন বাড়িতে ফিরতে পারবেন না, এবং অভিযোগ পেয়েও দোষীদের কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলে। গৌরবের আইনজীবী গার্গী গোস্বামীর কথায়, ‘‘পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। আগামী দিনেও যদি কোনও পদক্ষেপ না করা হয়, তা হলে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।’’
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুই তরফেই অভিযোগ পেয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাড়ি ভাঙচুর, মারধরে জড়িতদের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ প্রথম থেকেই গৌরবের পাশে রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘প্রথমত, গৌরব সেই সময়ে ডিউটিতে ছিলেন না। ফলে কর্তব্যে গাফিলতির প্রসঙ্গ আসে না। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছে, মেডিক্যাল কাউন্সিল কিংবা কোনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে অভিযোগের তদন্ত করাতে হবে। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন ধারায় মামলা করা যাবে না।’’ সামগ্রিক ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর প্রতিনিধিরা আজ, মঙ্গলবার বিকেলে স্টেথোস্কোপ এবং সাদা এপ্রন নিয়ে ‘নিমতা চলো’-র ডাক দিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিমতা থানার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি গৌরবকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থাও করবেন।
এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন গৌরব। এক আত্মীয়ের নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা শুনেই মনে হয়েছিল পাপ্পুর হার্টের কোনও সমস্যা হচ্ছে। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি যাব না, এমনটা কখনও বলিনি।’’ গৌরব জানান, তাঁর বাড়িতে অন্যেরা রয়েছেন। গত রবিবার উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফোনে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, কোনও রকম বেয়াদবি বরদাস্ত করা হবে না।
এ দিন গৌরব বলেন, ‘‘পাপ্পুকে এতটাই ভালবাসতাম যে, গত পুজোয় জামা কিনে দিয়েছিলাম। ওঁর মৃত্যুতে আমিও শোকস্তব্ধ। আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ওঁর পরিজনদের বোঝানোর মতো কেউ নেই। আর সেই সময়ে ওঁদের মানসিক অবস্থাও ঠিক ছিল না। আমার বাড়িতে হামলার ঘটনায় আশপাশের কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজন জড়িত। তারা কারা, সেটা পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছি।’’