বেহালার ম্যান্টন। ছবি: সংগৃহীত।
মুল্লুক কার?
বেহালার ম্যান্টনে তারাতলা অভিমুখী ট্রাক ও টেম্পোর একটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে স্থানীয় দোকানদারদের চাপা রেষারেষি শুরু হয়েছে গাড়ি রাখা নিয়ে। শাসকদলের সমর্থন পাওয়া টেম্পো ও ট্রাকচালকেরা সাফ জানিয়েছেন, তাঁরা সেখানে পুরনো। তাই দোকানদারদের গাড়ি রাখতে হলে অন্যত্র যেতে হবে। অন্য দিকে দোকানদারদের প্রশ্ন, তাঁরা কেন দূরে গাড়ি রাখবেন?
বিষয়টি ঘিরে বেজায় তরজা চলছে দু’ তরফে। শাসকদলের নেতা ওই ট্রাক ও টেম্পোচালকদের স্ট্যান্ডের সভাপতি। দোকানদারেরা জানিয়েছেন, একটি গাছে একটি চিরকুট ঝোলানো ছিল। গাছটি কাটা পড়লেও চিরকুটটির ছবি স্থানীয় দোকানদারেরা অনেকেই তুলে রেখেছেন। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, গত মে মাসে ওই চালকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, গাড়ি পিছু ৩০০ টাকা ও চাঁদা বাবদ ১০০ টাকা সংগঠনকে দিতে হবে তাঁদের। নতুন লাইন নিতে হলে কিংবা লাইনে গাড়ি চালাতে হলে সংগঠনকে ২০ হাজার টাকা এবং চালকদের ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
প্রীতম কর্মকার নামে এক গয়নার ব্যবসায়ী জানান, নিজের দোকানের সামনে গাড়ি রাখার জন্য তিনি ২২ হাজার টাকা খরচ করে কলকাতা পুরসভার অনুমোদন নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাক ও টেম্পোচালকেরা তাঁকে সেখানে গাড়ি রাখতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ প্রীতমের। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুরসভার অনুমোদন পেয়েও গাড়ি রাখতে পারছি না। টেম্পো ও ট্রাকের কারণে লোকজন ফুটপাতের উপরে মোটরবাইক রেখে দেন। ফুটপাতে চলা যায় না। সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। অথচ রাস্তা দখল করে গাড়ি রাখা কিংবা গাড়ি চালানোর দর ঠিক করে দিব্যি ব্যবসা চলছে।’’ এক টেম্পোচালকের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই সব দোকানদারেরা যত বছর ব্যবসা করছেন, তার চেয়ে বেশি সময় ধরে রয়েছে এই স্ট্যান্ড। এখানে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার কোনও জায়গা নেই। এক জন দোকানদারকে জায়গা দিলে অন্য অনেকেই আসবেন। তা হলে আমরা যাব কোথায়? আমাদের স্ট্যান্ডের বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। কী ভাবে কলকাতা পুরসভা ওই ব্যক্তিকে এখানে গাড়ি রাখার অনুমতি দিল জানি না।’’
বড়িশায় লরিতে পিষ্ট হয়ে এক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুর পরে ডায়মন্ড হারবার রোড নানা ধরনের দখলদারির জেরে কী ভাবে অপ্রশস্ত হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় মহলে জোর চর্চা চলছে। তার মধ্যে রয়েছে ট্রাক ও টেম্পোর স্ট্যান্ডটিও। দখলদারির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বেহালা মিনি ট্রাক ও টেম্পো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শক্তিপদ মণ্ডলের দাবি, সারা কলকাতা জুড়েই এ ভাবে গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। গাড়িচালকদের ওই চিরকুটে তাঁর নামও ছিল। তিনি বলেন, ‘‘এই সব গাড়ি তো মানুষের নিত্য প্রয়োজনের জন্যই রাস্তায় নামে। গাড়ির মালিক সরকারকে কর দেন। সবাই যদি নিজেদের দোকানের সামনে গাড়ি রাখতে চান, তবে ওই লরি কিংবা টেম্পোচালকেরা কোথায় যাবেন? জনসংখ্যা বাড়ছে, গণ পরিবহণও বাড়ছে। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে।’’