রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই আর্কাইভের উদ্বোধন করেন।
কলকাতা পুরসভার সমস্ত নথি রাখার জন্য ‘মিউনিসিপ্যাল গেজেট’ রাখার প্রথা বহুদিন যাবত ছিল। সেগুলি পুরনো হয়ে যাওয়ায় পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আধুনিক পদ্ধতিতে শহরের ইতিহাসের ক্ষয়িষ্ণু পাতাগুলিকে সাজিয়ে রাখার জন্য কলকাতা পুরসভায় তৈরি করা হয়েছে ‘ডিজিটাল আর্কাইভ’। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তৈরি হয়েছে সমস্যা।
কলকাতা পুরসভার আর্কাইভ দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘এই ধরনের আর্কাইভ উন্নত করতে প্রয়োজন লোকের। এখানেই আমাদের ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে আর্কাইভে লোকের সংখ্যা কম। এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য মেয়রকে ইতিমধ্যেই আমি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র শহরের পুরনো নথিই সংরক্ষণ করা নয়, শহরের পুরনো ছবি এবং তথ্য সম্বলিত নানান বইগুলিও স্থান পেয়েছে এই আর্কাইভে। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল গেজেট-এর তৎকালীন সম্পাদক অমল হোমের নামে এই আর্কাইভের নামকরণ করা হয়েছে ‘অমল হোম আর্কাইভ।’ বর্তমানে পুরসভার রোজকার খবর এবং পুর-পরিযেবা মুলক বিভিন্ন তথ্যের সংরক্ষণ ছাড়াও অতীত দিনের সমস্ত নথিকে ডিজিটালে রাখা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোক না থাকতে এই কাজ অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। এমনকি, যাঁরা গবেষণা করতে আসছেন লোকাভাবে তাঁদের পক্ষেও তথ্য পেতে অসুবিধা হচ্ছে বলেও পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই সমস্যা সত্ত্বেও, প্রায় ২০,০০০ পুরনো নথি ইতিমধ্যেই ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়েছে। একই পদ্ধতিতে অনেক পুরনো শহরের ছবিও সংরক্ষিত করা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট পুরসভার সাপ্তাহিক মুখপত্র। কলকাতার পুরসভার বিভিন্ন পরিষেবামূলক খবর ছাড়াও প্রাত্যহিক বাজারদর, কলকাতা বিষয়ক নানান ধরনের ছবি এই মুখপত্রে প্রকাশিত হত। ১৯২৪ সালের ১৫ নভেম্বর অমল হোমের সম্পাদনায় এই মুখপত্র প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই মুখপত্র নিয়মিতভাবে বেরিয়েছে। সত্তরের দশকের শেয থেকে এই পত্রিকার প্রকাশ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই পুরসভার আর্কাইভ নির্মাণে উদ্যোগী হয়। ২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসে। তারপরেই ২০১১ সালেই এই প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেযে, ২০১৫ সালের ৩ মার্চ কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমানে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই আর্কাইভের উদ্বোধন করেন।
আর্কাইভের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার আধিকারিক অরুণ রায় বলেন, ‘‘ মিউনিসিপ্যাল গেজেটের পুরনো পাতা এবং শহরের বিভিন্ন শিল্পীর কলকাতা বিষয়ক ছবি ডিজিটালের মাধ্যমে রেকর্ড করার চেষ্টা ছাড়াও অডিও ভিস্যুয়াল শাখাও খোলা হয়েছে। সেখানে কলকাতার পুরনো অনেক ছবি ছাড়াও এই শহরের নামজাদা চলচ্চিত্রকারদের ছবিও প্রদর্শন করা হয়।’’ এ দেশের তো বটেই, এমনকি বিদেশেরও অনেক গবেষক এ ইতিহাসবিদ গবেষনার জন্য পুরসভার এই আর্কাইভে আসতে শুরু করেছে বলেও অরুণবাবু জানান।