অগত্যা: আটকে প্রকল্প। এ ভাবেই চলছে বিকিকিনি। নিজস্ব চিত্র
উন্নয়ন থমকে গিয়েছে সংখ্যার জাঁতাকলে।
তাই বহাল থাকছে খোলা আকাশের নীচে বা প্লাস্টিকের ছাউনির তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া দোকানি-ব্যবসায়ী, বেহাল নিকাশি আর অপর্যাপ্ত আলোয় কেনাবেচার রোজনামচা। গ্রীষ্ম হোক কি বর্ষা, টালিগঞ্জ-হরিদেবপুরের করুণাময়ী বাজারের চিত্রটা এখন এমনই, প্রায় নরক হয়ে যাওয়ার দশা। অথচ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মেনে আধুনিক ধাঁচে এই বাজারটি গড়ে তোলার পরিকল্পনাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে আটকাল কোথায়? অভিযোগ, মাপজোকের দিন হঠাৎ করে দোকানদারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় হরিদেবপুরের প্রস্তাবিত করুণাময়ী বাজার তৈরির প্রকল্প এখন পড়ে রয়েছে বিশ বাঁও জলে। ফলে দীর্ঘ ৩৩ বছর পরেও নতুন রূপে বাজার করতে পারল না কলকাতা পুরসভা।
পুরসভা সূত্রের খবর, যে জমিতে বাজারটি বসে সেটি এ কাজেই দান করেছিলেন এক ব্যক্তি। ১৯৮৫ সালে বেহালা পুরসভা থেকে এই বাজারটি কলকাতা পুরসভার অধীনে চলে আসে। পুরসভা সূত্রের খবর, আরও জমির প্রয়োজন থাকায় বাজারটি নতুন করে তৈরিতে সমস্যা হচ্ছিল| বাজার সংলগ্ন কিছু জমি ছিলই। মালিকের কাছে তার জন্য আবেদন করে মিলেছে সেই জমিও।
এ বার তবে বাধা কোথায়?
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, মাস ছয়েক আগে মাপজোক করতে বাজারে হাজির হন বাজার দফতরের লোকজন। দিনের শেষে দেখা যায়, পুরসভার কাছে বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের যে তালিকা গিয়েছে সেখানে রয়েছে ১০০-র বেশি অতিরিক্ত নাম। এর পরেই বাজারের পুরনো ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না শূরকে বিষয়টি জানান। রত্নাদেবী দেখেন, বাজারে দোকানদারের সংখ্যা কমবেশি ১০০ থেকে ১১০। অথচ বাজার থেকে পুরসভার হাতে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে সংখ্যা ২৬৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে!
শুধু তা-ই নয়। এমনও কথা হয়েছিল, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিটি পুরসভাকে হস্তান্তর করে জমির মালিকের উপর থেকে কর তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু সেই কাজও হয়নি। এই দুই জটেই আপাতত আটকে আছে করুণাময়ী বাজারের সংস্কারের কাজ।
এ দিকে প্রকল্পের এই ভরাডুবির জন্য বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, বাজারের পুরনো ব্যবসায়ী বা তাঁদের উত্তরাধিকারী দোকানদারেরা জায়গা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অভিযোগ, অতিরিক্ত এত জন ব্যবসায়ীকে ওই তালিকায় বাজার দফতর ব্যবসায়ী বলে ঢোকানোয় ক্ষতি হচ্ছে সকলেরই। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে তারকবাবুর দাবি, “বিষয়টি দেখছেন স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না শূর। বাজার দফতর তালিকার বিষয়ে কিছু জানে না।” এ দিকে রত্নাদেবীর দাবি, বাজারটি সংস্কার করার কথা পুরসভার বাজার দফতরের। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাজ ছিল একটি স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করে দেওয়ার। আমি তা করে দিয়েছিলাম।’’
দায় চাপানোর ঠেলায় তাই আপাতত ফাইলবন্দি হরিদেবপুরের করুণাময়ী বাজার প্রকল্প।