JU Student Death

‘আমি চাই যাদবপুরে দ্রুত পঠনপাঠন স্বাভাবিক হোক’, মৃতের বাবার আর্জির পরও মারপিট, জখম ছাত্র

সমস্ত আবেদনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজনৈতিক ‘ফায়দা’ তুলতে অব্যাহত রয়েছে অশান্তি। বৃহস্পতিবার যার কদর্য রূপ ধরা পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ০৭:১৮
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-মৃত্যুর প্রতিবাদে এসএফআইয়ের মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

এক দিকে সদ্য সন্তানহারা পিতার আকুতি, শান্তি ফিরে আসুক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন অনেকেই।

Advertisement

অন্য দিকে সেই সমস্ত আবেদনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজনৈতিক ‘ফায়দা’ তুলতে অব্যাহত রয়েছে অশান্তি। বৃহস্পতিবার যার কদর্য রূপ ধরা পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনেই।

এক যুবককে ফেলে মারার ছবি ফুটে উঠল টিভির পর্দায়। নাক ফেটে রক্ত পড়ছিল সেই যুবকের। পুলিশ এসে তাঁকে প্রিজ়ন ভ্যানে করে নিয়ে চলে যায়।

Advertisement

যাদবপুরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে শোরগোল পড়েছে। তার মধ্যেই মৃত ছাত্রের বাবা বৃহস্পতিবার নদিয়ায় বলেন, “আমি চাই, দ্রুত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন স্বাভাবিক হোক। আমি চাই না, আমার ছেলের মৃত্যুর প্রতিবাদ করতে গিয়ে, বিচার চাইতে গিয়ে, দুই দল পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল-অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ুক। আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ফিরে আসুক।”

কিন্তু কে শোনে তাঁর কথা?

বৃহস্পতিবার সারাদিনের মিছিল, ধর্না অবস্থান তো ছিলই, পড়ন্ত বিকেলে দু’টি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের সামনের এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল।

পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে ৮বি বাসস্ট্যান্ডে যুব মোর্চার অবস্থানে এ দিন যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর সভার পরে তাঁকে কালো পতাকা দেখানোর অভিযোগ ওঠে ‘স্বাধীন’ ছাত্র সংগঠন রেভলিউশনারি স্টুডেন্ট ফেডারেশন (আরএসএফ)-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাই তাঁর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানেরা পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হয়। ছাত্রদের লাথিও মারতে দেখা গিয়েছে এক জওয়ানকে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য কেন এ ভাবে আক্রমণ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী? কালো পতাকা দেখানো নিয়ে যুব মোর্চা ও এবিভিপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আরএসএফের কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখানোর অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে তুলে নিয়ে যায়। তবে রাতে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। যুব মোর্চার এই হামলার নিন্দা করে এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, শুভেন্দুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও আরএসএফ কর্মীদের মারধর করে। ওই ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) এক্স হ্যান্ডলে দিয়ে তৃণমূলের তরফে ঘটনার সমালোচনা করা হয়।

যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ বলেন, ‘‘মূলত অতি বামপন্থীরা হামলা চালিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং ও মাদক চক্রের বিরুদ্ধে এই ধর্না কর্মসূচি। কর্মসূচিতে মানুষের যোগদান দেখে যাঁরা ভয় পেয়েছেন, যাঁরা ভাবছেন, তাঁদের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, সেই মুষ্টিমেয় কিছু ছেলে হামলা চালিয়েছেন।’’ আরএসএফের দাবি, হামলা চালিয়েছে বিজেপি।

দুপুরে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির মিছিল ছিল ঢাকুরিয়া ব্রিজ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, “সমস্ত দোষী এখনও ধরা পড়েননি। প্রত্যেককে ধরতে হবে এবং তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে র‌্যাগিং এবং বহিরাগত মুক্ত করতে হবে।” এসএফআই-এর মিছিল যাদবপুরের চার নম্বর গেটে পৌঁছলে সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাঁদের বাধা দেয়। বাধা সরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনেসভা করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement