সল্টলেকের এ ই ব্লকে জমে রয়েছে জল। — নিজস্ব চিত্র
বাগুইআটির পরে সল্টলেকের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড। কী ভাবে মানুষই ডেকে আনছেন ডেঙ্গি-বিপদ, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হতে পারে এই ওয়ার্ডের বিজি ব্লক।
পাঁচ মাসেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি রোগের প্রকোপ। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কেন ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এল না, তার পিছনে প্রধান তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন পুরনিগমের কর্মীরা— (১) বাড়ির বাগানে টবে জমা জল, পোষা পাখিদের খাওয়ার পাত্রে জল ভরে রাখা। (২) ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা ডাবের খোলা, থার্মোকলে জমে থাকা জল। এবং (৩) বাড়ি তৈরির জন্য যে সব কুয়ো খোঁড়া হয়েছে, তার মুখ খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা। এর পিছনে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
নির্মীয়মাণ বাড়ির জন্য সল্টলেকে খোঁড়া কুয়োগুলির মুখ বন্ধ করার জন্য অনেক আগেই নোটিস দিয়েছিল বিধাননগর পুর নিগম। কিন্তু সোমবার বিজি ব্লকের একটি প্লটে গিয়ে দেখা গেল, জলভর্তি কুয়োর মুখ খোলা। সেই জল দিয়েই নির্মাণকাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজোর সময়ে কাজ হয়নি। ফলে খোলা মুখের ওই কুয়োয় ডিম পেড়ে গিয়েছে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশা।
সেখান থেকে মশা উড়ে গিয়েছে আশপাশে। বিজি ব্লকের বাড়িতে-বাড়িতে জ্বরের রোগী। ওই রোগীদের অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়েছে পরীক্ষায়। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান অনিতা মণ্ডল নিজেই কবুল করছেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ, বিশেষত ডেঙ্গির প্রকোপ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’’ খোলা কুয়ো বন্ধ করতে তিনি কোনও চেষ্টা করেননি কেন? অনিতাদেবীর জবাব, ‘‘আমরা তো চিঠি দিয়েছি।’’
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, পুজোর পরে সোমবারই খুলেছে পুরসভা। আজ, মঙ্গলবার থেকে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ঘুরে যেখানে যেখানে খোলা কুয়ো পাওয়া যাবে, সেই প্লটে নির্মাণকারী সংস্থার থেকে জরিমানা আদায় করা হবে।
নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থাও। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা
কিছু জায়গায় সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, তার মধ্যে কুয়ো বন্ধ বা জমা জল না সরালে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে সাত দিন অন্তর ওয়ার্ডে মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় কাউন্সিলর অনিতাদেবীর।
কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সপ্তাহে অন্তত দু’তিন দিন মশা মারার তেল স্প্রে করা হবে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য লোকাভাবের কথা বলেই দায় সেরেছেন।
শুধু বিজি ব্লক নয়, বৈশাখী আবাসন ও তার আশপাশেও মিলেছে মশার আঁতুরঘর। এখানেও জঞ্জালের স্তূপে ফেলে দেওয়া পাত্র, কাপ, প্লাস্টিকের কাপে জমে থাকা পরিষ্কার জলে পাওয়া গিয়েছে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা। গত পাঁচ মাসে ওই আবাসনের অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বরে আক্রান্তদের কয়েক জনের রক্তে মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণুও। তা সত্ত্বেও মানুষ যেমন সচেতন হননি, তেমনই সক্রিয় হয়নি পুরসভাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার তরফে এই পরিস্থিতিতে মাইক বা ট্যাবলো নিয়ে সচেতনতার প্রচারও যথাযথ ভাবে হচ্ছে না।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘পুরকর্মীরা কাজ করছেন। তাঁদের পরিশ্রম বা নজরদারিতে গাফিলতি নেই। পতঙ্গবিশারদ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ মেনেই কাজ হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, এতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ বারবার প্রচার করেও বাসিন্দাদের একাংশের সচেতনতা ফিরছে না। তা সত্ত্বেও ফের মশা নিয়ন্ত্রণে লাগাতার অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতার প্রচারে বিশেষ পদক্ষেপ করা হবে জানিয়েছেন প্রণয়বাবু।