—প্রতীকী চিত্র।
শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। শুক্রবার কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ২৭০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত বছরের থেকে বেশি।’’ উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও ইদানীং উত্তরেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি অনাথ আশ্রমে ৩০০ জন আবাসিকের বেশির ভাগই জ্বরে আক্রান্ত বলে পুরসভা সূত্রের খবর। তাদের মধ্যে সাত জনের ডেঙ্গি ও সাত জনের ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে। পুরসভার পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন রেহানা খাতুন বলেন, ‘‘এই বরোর ৪৮ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই দু’টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে যথাক্রমে ১২ ও ৯ জন আক্রান্ত।’’
বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ওই অনাথ আশ্রমের কর্ণধার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে। তিনি জানান, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি অনেক আবাসিক জ্বরেও ভুগছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, ওই অনাথ আশ্রম ক্যাম্পাসে ৪১টি পাত্রের অধিকাংশেই ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই-এর লার্ভা মিলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোথাও ডেঙ্গির মশার লার্ভা মিললে সেই জায়গার মালিককে নোটিস দেয় পুরসভা। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে অনাথ আশ্রমের মালিক, পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে-কে কেন নোটিস দেবে না পুরসভা? এই প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পুর স্বাস্থ্য বিভাগ ওই অনাথ আশ্রমের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখবে। কোথাও জমা জলে লার্ভা মিললে পুরসভা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। তবে কাউন্সিলরকে নোটিস দেওয়া হবে না। কারণ, ওই অনাথ আশ্রমে বহু গরিব ছেলে থাকে। কাউন্সিলর তাঁদের ভরণপোষণ করছেন।’’ বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে কি স্রেফ শাসকদলের পুরপ্রতিনিধি বলেই ছাড় মিলছে?
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মেয়রের নির্দেশে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডেঙ্গিতে আক্রান্তের পরিসংখ্যান দিলেও মৃতের সংখ্যা জানাননি। মেয়র তখন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে দু’টি মৃত্যুর হিসাব রয়েছে। তাঁদের এক জন বাইরে থেকে এসেছিলেন।’’ ডেঙ্গিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও শহর জুড়ে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষত, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আক্রান্তের পরিসংখ্যান ভাবাচ্ছে পুর প্রশাসনকে। দক্ষিণ কলকাতার পাশাপাশি উত্তরের একাধিক ওয়ার্ডেও গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গির দাপট বাড়তে থাকায় চিন্তিত পুর প্রশাসন। এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘ডেঙ্গি হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যায় না। পুরসভার ক্লিনিকে বহু মানুষ জ্বর নিয়ে আসছেন। সেপ্টেম্বরের শেষে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। তাই নভেম্বর পর্যন্ত সতর্ক থাকব।’’
মেয়রের অভিযোগ, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাদে ডাবের খোলায় ও ছাত্রাবাসের পিছনে খাবারের পাত্রে জমা জলে মশার লার্ভা মিলেছে। ডেঙ্গিতে মৃত্যু হলে কেবল প্রশাসনকে দায়ী না করে সকলে সতর্ক ও দায়িত্ববান হোন।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন সরকারি ভবনে জল জমে তাতে মশার লার্ভা যাতে না জন্মায়, সে বিষয়ে এ দিন পূর্ত দফতরের সচিবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মেয়র।