ফাইল চিত্র।
কোনও স্কুল কিনেছে মশা মারার ব্যাট, কোনও স্কুল বিকেল থেকে ক্লাসঘরের সব জানলা বন্ধ রাখছে। কোথাও আবার স্কুল শুরুর আগে জ্বালানো হচ্ছে মশার ধূপ।
করোনার প্রকোপ আগের চেয়ে খানিকটা কমলেও এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। এই অবস্থায় স্কুল খোলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কর্তৃপক্ষের চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গি। কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই নানা কারণে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার আশানুরূপ নয়। তার উপরে ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়তে থাকলে উপস্থিতির হার আরও কমে যাবে কি না, এখন সেই আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, মশার উপদ্রব যাতে না বাড়ে, তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদেরও।
যেমন, বাগজোলা খালের কাছেই কেষ্টপুর দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দির। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজ়রিন নাহার জানালেন, পাশেই খাল থাকার জন্য স্কুলে যাতে মশার উৎপাত না বাড়ে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি স্কুলে একটি পরীক্ষা হয়েছিল। পরীক্ষা শুরুর আগে ক্লাসে মশা মারার স্প্রে করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “মশা মারতে দু’টি ব্যাটও কেনা হয়েছে। এখন যেহেতু পড়ুয়া কম আসছে, তাই একতলায় কোনও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। সব ক্লাস হচ্ছে দোতলা এবং তিনতলায়। সেখানে মশার উপদ্রব তুলনায় কম। সেই সঙ্গে পুরসভার তরফেও মশা মারার তেল ও ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।’’
সম্প্রতি বাগুইআটি এবং কেষ্টপুর এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপের কথা শোনা গিয়েছে। ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনাও। বাগুইআটি ও কেষ্টপুরের খালধার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ২০১৭ সালে ডেঙ্গির সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিয়েছিল। কেষ্টপুর সংলগ্ন জগৎপুর বাজারের বাসিন্দা সুভাষ দাস বলেন, “বাড়িতে যাতে ছেলেকে মশা না কামড়ায়, সেই ব্যবস্থা তো নিয়েছি। কিন্তু স্কুলেও তো বহুক্ষণ ছেলে থাকে। সেখানেও মশা মারার উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার। না হলে কোন ভরসায় ওকে স্কুলে পাঠাব?”
স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনার পরে ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানালেন শ্যামবাজার এলাকার পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা। তিনি বলেন, “ডেঙ্গির আতঙ্কে পড়ুয়ারা যাতে স্কুলে আসতে ভয় না পায়, সে দিকে সব সময়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। স্কুল চত্বরে জল জমতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরসভার তরফে নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো হয়। আমাদের স্কুলের পাশেই দেশবন্ধু পার্ক। সেখানে যাতে কোনও আবর্জনা জমে না থাকে, নজর দেওয়া হচ্ছে সেই দিকেও।’’ সুপ্রিয়বাবু জানান, স্কুলে এখন প্রতি ক্লাসে আলাদা করে প্রার্থনা হয়। প্রার্থনার পরে করোনা এবং ডেঙ্গি নিয়ে পড়ুয়াদের বিশেষ ভাবে সচেতন করা হচ্ছে। বিকেল থেকে বন্ধ রাখা হচ্ছে সব ক্লাসঘরের জানলা।
কসবার চিত্তরঞ্জন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানালেন, মশার উপদ্রব তাঁদের স্কুলে কম। কিন্তু মাঝেমধ্যেই যে ভাবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর শোনা যাচ্ছে, তাতে তাঁরা কোনও রকম
ঝুঁকি নিচ্ছেন না। অনিন্দ্যবাবু বলেন, “কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট। পড়ুয়ারা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে, সে জন্য ক্লাসঘরগুলিতে নিয়মিত মশা মারার স্প্রে দেওয়া হচ্ছে।’’ উল্টোডাঙার সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক কৌশিক সামন্তের দাবি, পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো ও স্কুলের আশপাশে কোথাও যাতে জল না জমে, তা দেখা হচ্ছে।