Dengue Deaths In West Bengal

বাড়ছে ডেঙ্গিতে মৃত্যু, বহাল তথ্য গোপনের প্রবণতা

গত সোমবার প্রথম জানা যায়, ২২ জুলাই ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’-এ ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে দশ বছরের এক বালিকার। মনে করা হয়েছিল, চলতি মরসুমে সেটিই রাজ্যে প্রথম ডেঙ্গিতে মৃত্যু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

রিঙ্কি রায় —ফাইল চিত্র।

চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত ছ’জনের ডেঙ্গি মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁদের মধ্যে ন’মাসের শিশু, দশ ও তেরো বছরের বালিকার পাশাপাশি আরও দু’জন তরুণী এবং এক বৃদ্ধ রয়েছেন। তালিকায় জেলা ছাড়াও কলকাতা, দক্ষিণ দমদম, বারাসত, নদিয়ার তাহেরপুরও যুক্ত হয়েছে।

Advertisement

গত সোমবার প্রথম জানা যায়, ২২ জুলাই ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’-এ ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে দশ বছরের এক বালিকার। মনে করা হয়েছিল, চলতি মরসুমে সেটিই রাজ্যে প্রথম ডেঙ্গিতে মৃত্যু। কিন্তু মঙ্গলবার জানা গেল, এর আগে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ২১ জুলাই মৃত্যু হয় বাঙুরের বাসিন্দা রিঙ্কি রায়ের। অথচ সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বা মৃতের তথ্যই জানাচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর।

বরং ‘এখনও তেমন কিছু হয়নি’ অথবা ‘মৃত্যু নিয়ে কোনও খবর নেই’ গোছের মন্তব্য করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এ বারও প্রথম থেকেই তথ্য গোপনের প্রবণতা স্বাস্থ্য দফতরে? অন্য দিকে আবার, বাংলাদেশ থেকে আগত লোকজনকে ডেঙ্গির বাহক বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা পুর স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ! তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখানে মৃত বাড়ছে। ওই দেশ থেকে আসা লোকজন ডেঙ্গির বাহক হতে পারেন।’’

Advertisement

যা শুনে বিস্মিত চিকিৎসকদের একাংশও। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘আগে ছিল অজানা জ্বর। তার পরে হল তথ্য গোপন। এখন দায় চাপানো হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের উপরে! মনে রাখতে হবে, আগুন লাগার পরে জল নিয়ে দৌড়নো জনস্বাস্থ্যের নিয়ম নয়।’’

গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের মোট সংখ্যা বলতে নারাজ স্বাস্থ্য ভবন। যদিও সরকারি তথ্য বলছে, গত ২৭ জুন পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৪২। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে বলেই বেসরকারি সূত্রের খবর। রাজ্যে ক্রমশ ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনের অভ্যন্তরীণ তৎপরতায়। যেখান থেকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নির্দেশ গিয়েছে জেলায়। আজ, বুধবার সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবে স্বাস্থ্য ভবন। কলকাতা পুরসভাতেও সব দফতরের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে ডেঙ্গি সংক্রান্ত বৈঠক করবেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী শুধু জানান, চলতি মরসুমে পুরসভা সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। সব রকম ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ঘুরে রিপোর্ট দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের ছ’টি দল। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া ও বীরভূমের কয়েকটি জায়গায় বাড়তি নজরের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, দুর্গাপুরের পলাশডিহা অঞ্চলে গত ৬ দিনে প্রায় ২৩ জন আক্রান্ত। জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সেখানকার দৈনিক রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি রানাঘাটেও। মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ দমদমে আক্রান্ত ৫০ পেরিয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত তিনশো।

সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের দাবি, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতিতে রাজ‍্য জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। আগেও আবেদন করেছি যাতে প্রাক্‌ বর্ষা থেকেই মশা দমনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু গড়িমসিতে তা হয়নি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সরকারকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় নামতে হবে।’’

মঙ্গলবার পুরসভায় অতীন দাবি করেন, রাজ্যের মাধ্যমে তাঁরা কেন্দ্রে আবেদন করবেন, বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে আসা মানুষের ডেঙ্গি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হোক। পিকনিক গার্ডেনে ১০ বছরের বালিকার মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের আগে যে কেন্দ্রে বালিকার ডেঙ্গি পরীক্ষা হয়েছিল, তারা রিপোর্ট পুরসভায় জানায়নি। তাদের শো-কজ় করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement