কারখানার সামনে ছেলে আকাশকে নিয়ে ধর্নায় মৌমিতা মাজি। মঙ্গলবার, হাওড়ার ধূলাগড়ে। নিজস্ব চিত্র।
কারখানার কাজে বেরিয়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল স্বামীর। তার পর থেকে সংসার চালাতে বার বার করে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় শেষে এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে ওই বেসরকারি সংস্থার সামনে ধর্নায় বসলেন তিনি। এমনকি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যারও হুমকি দেন ওই মহিলা।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার ধূলাগড়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বাড়ি ফেরেন ওই মহিলা। তবে দু’-এক দিনের মধ্যে সুরাহা না হলে, তিনি ফের ধর্নায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন। আদতে ওড়িশার বাসিন্দা হলেও, ধূলাগড়ের কান্দুয়ায় ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী মৌমিতা ও এক ছেলে আকাশকে নিয়ে থাকতেন অক্ষয় মাজি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ধূলাগড়ের ফুড পার্কের একটি কারখানায় মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন অক্ষয়।
মৌমিতা জানান, কাজের জন্য মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত অক্ষয়কে। প্রতিদিনের মতো গত ১২ ডিসেম্বর সকালেও ওই যুবক বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজে গিয়েছিলেন। দুপুরে স্ত্রীকে ফোন করে অক্ষয় জানিয়েছিলেন, অফিসের কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে। এর পরে আর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি মৌমিতার। তিনি বলেন, ‘‘বিকেল ৫টা নাগাদ ফোন করে জানানো হয়, ওঁর দুর্ঘটনা ঘটেছে। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে দেহ শনাক্ত করি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা চলে যাওয়ার পর থেকে সংসার চালাতে পারছিলাম না।’’ তাঁর অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ বা চাকরির আশ্বাস দেওয়া হলেও কিছুই হয়নি।
এ দিন সকালে সাত বছরের ছেলে আকাশকে নিয়ে ওই কারখানার গেটে পৌঁছে যান মৌমিতা। স্বামীর ছবি নিয়ে বসে পড়েন ধর্নায়। সামনেই কেরোসিন ভর্তি একটি বোতল রেখেছিলেন। মৌমিতা বলেন, ‘‘কোনও রোজগার নেই। আর কী করব। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।’’ বিকেলে কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে মৌমিতাকে তাঁর চাকরির বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। তার পরেই ছেলেকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন।