ক্যানসারের চিকিৎসায় কি প্যাকেজ, বিতর্ক

ক্যানসার চিকিৎসার খরচ কি ‘প্যাকেজ’-এ বাঁধা সম্ভব? তা নিয়ে রবিবার একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৯
Share:

হৃদ্‌যন্ত্র কিংবা কিডনির অসুখ, একাধিক রোগে বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার খরচ বাবদ নির্দিষ্ট ‘প্যাকেজ’ তৈরি করে। কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসার খরচ বাবদ কোনও প্যাকেজ থাকে না। অধিকাংশ রোগীর পরিজনেরা চিকিৎসার খরচ সম্পর্কে কোনও ধারণা করতেই পারেন না। যার জেরে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের।

Advertisement

ক্যানসার চিকিৎসার খরচ কি ‘প্যাকেজ’-এ বাঁধা সম্ভব? তা নিয়ে রবিবার একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন।

ক্যানসারের মতো যে সব রোগে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা নিয়ে থাকে অনিশ্চয়তা, তাতে চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেওয়া সঙ্গত কি? তাতে চিকিৎসার মান পড়ে যাবে না তো? আলোচনাসভায় এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন বক্তারা।

Advertisement

এ দিনের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্ত্রী সুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর মতে, খরচ বেঁধে দিয়েও চিকিৎসার মান বজায় রাখা যেতে পারে। সম্প্রতি স্টেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন বড় কোম্পানিও এখন স্টেন্টের দাম কম করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মান একই থাকছে।’’

উল্টো দিকটাও দেখিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়। তিনি মনে করান, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবসায়িক লাভের জন্যই স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিনিয়োগ করে। ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সেই পরিকাঠামো তৈরি করে কম খরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া কি বাস্তবিক, প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব চিকিৎসক প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রক ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে একাধিক প্রকল্প শুরু করছে। যদি কর্পোরেট হাসপাতালগুলিকে মন্ত্রক পিপিপি মডেলে ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করার প্রস্তাব দেয়, তার পরেও কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতাল এগিয়ে যাবে না। কারণ, কর্পোরেট হাসপাতাল অনেক বেশি লাভ করতেই শুধু আগ্রহী।’’ আলোচনার আর এক সঞ্চালক অভিনেতা বাদশা মৈত্রের আবার যুক্তি, বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে হাতিয়ার করে ব্যবসায়ীরা লাভ করতে চাইছেন। কিন্তু বাদ চলে যাচ্ছে মানব কল্যাণের দিকটা।

তবে ক্যানসারের মতো অসুখ যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চলে, তার খরচের প্যাকেজ তৈরিতে বিমা সংস্থার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে উঠে আসে আলোচনায়। কিন্তু একাংশের বক্তব্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা পলিসি বিক্রির সময়ে ক্রেতাদের স্পষ্ট ভাবে সবটা বোঝায় না। ফলে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।

ক্যানসারের চিকিৎসায় যেহেতু নানা জটিলতা রয়েছে, তাই অন্যান্য রোগের চিকিৎসার মতো খরচ প্রথম থেকে বেঁধে দেওয়া কঠিন। কিন্তু রোগীর পরিজনদের খরচের ধারণা দেওয়া যায়। সেই কাজ করতে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের, এমনই মত চিকিৎসকদের। আলোচনায় উপস্থিত ক্যানসার চিকিৎসক সোমনাথ সরকারের কথায়, ‘‘রোগীর পরিজনদের প্রি-ট্রিটমেন্ট কাউন্সেলিং খুব জরুরি। সামর্থ্যের মধ্যে কী ভাবে চিকিৎসা করা যায়, তা নিয়ে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের কথা বলতে হবে।’’

চিকিৎসক কতটা রোগীর সঙ্গে কথা বলেন, কথায় কথায় সে প্রশ্নও ওঠে। এ প্রসঙ্গে আলোচনার অন্যতম বক্তা অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ অনেক কিছুই জানেন না। তাই বিভ্রান্তিও বেশি। সেগুলি কাটাতে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসককেই।’’ আর এক বক্তা অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার বলেন, ‘‘ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারকে অস্ত্রোপচারের পরে হঠাৎ কয়েক লক্ষ টাকা বিল ধরালে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা বিপাকে পড়েন। আগে থেকে খরচের ধারণা দিতে পারলে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement