চাপান-উতোরে ঢাকা পড়ে গেল পরিষেবার প্রশ্ন

পুরভোটের আগে এমন একটি মঞ্চে যা হওয়ার কথা, তা-ই হল। একে অপরের দিকে আঙুল তুললেন, প্রতিপক্ষকে ‘মিথ্যাচারী’ বলতেও কসুর করলেন না কেউ। পাল্টা দাবি ধেয়ে এল, ‘‘শহরের উন্নয়নে আমরা যা করেছি, তা আগে কখনও হয়নি।’’ পুর-নির্বাচনের আবহে এমন ভাবেই চাপানউতোরে জমে উঠল বৃহস্পতিবারের বারবেলা। সৌজন্য, শহরের এক বণিকসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২২
Share:

পুরভোটের আগে এমন একটি মঞ্চে যা হওয়ার কথা, তা-ই হল। একে অপরের দিকে আঙুল তুললেন, প্রতিপক্ষকে ‘মিথ্যাচারী’ বলতেও কসুর করলেন না কেউ। পাল্টা দাবি ধেয়ে এল, ‘‘শহরের উন্নয়নে আমরা যা করেছি, তা আগে কখনও হয়নি।’’ পুর-নির্বাচনের আবহে এমন ভাবেই চাপানউতোরে জমে উঠল বৃহস্পতিবারের বারবেলা। সৌজন্য, শহরের এক বণিকসভা। যাতে হাজির ছিলেন কলকাতায় তৃণমূলের দুই মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার ও দেবাশিস কুমার, সিপিএম-এর তরফে প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেসের কনক দেবনাথ। আমন্ত্রিত হয়েও আসেনি শুধু বিজেপি।

Advertisement

‘নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত কলকাতার মানুষ’— বৃহস্পতিবার পুরভোটের মুখে এ বিষয়ে এক বিতর্কের আয়োজন করে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’। সেখানে বক্তাদের তালিকায় নাম ছিল এই চার দলের সদস্যদের। তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসের তরফের বক্তারা হাজির থাকলেও, সভায় আসেননি বিজেপি-র অসীম সরকার। ছিলেন না কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। তাতে অবশ্য উৎসাহে ভাটা পড়েনি। তৃণমূল-বাম, দু’পক্ষের বাক্‌যুদ্ধে নিছক একটি বিতর্ক সভা পরিণত হল রাজনৈতিক ‘যুদ্ধে’।

যদিও এ দিনের সভার শুরুতেই সঞ্চালক জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও নির্দিষ্ট সময়ের পুর-পরিষেবার কথা এখানে বলা হয়নি। বরং এই সভা মনে করে, শহরের মানুষ স্বাভাবিক ভাবে পুর-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। তাই ওই বিষয়ের উপরেই বিতর্ক সীমাবদ্ধ রাখার কথাও বলা হয়। কিন্তু প্রথমেই তাতে ছন্দপতন ঘটান কংগ্রেসের কনক দেবনাথ। বলেন, ‘‘শহরকে লন্ডন বানাবেন বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫ বছর হয়ে গেল। সেই প্রতিশ্রুতি স্বপ্নই থেকে গেল।’’ কলকাতায় তেমন কোনও উন্নয়নই হয়নি বলে দাবি করলেন তিনি।

Advertisement

কংগ্রেস নেতার বক্তব্য শেষ হতেই দেবব্রতবাবু বলতে থাকেন, ‘‘গত ৫ বছরে শহরে পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি, জঞ্জাল অপসারণে সবচেয়ে ভাল কাজ হয়েছে। আগে ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তায় ৩-৪ দিন ধরে জল জমে থাকত। এখন মাত্র ২-৩ ঘণ্টায় জল নেমে যায়।’’ কলকাতায় গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন গঙ্গানদীর দীর্ঘ যাত্রাপথের আর কোথায়ও নেই বলে দাবি করেন ওই তৃণমূল নেতা। গার্ডেনরিচ এবং ধাপা জলপ্রকল্পও তাঁদের আমলেরই কৃতিত্ব বলে জানান দেবব্রতবাবু। তখনও অবশ্য সভায় এসে পৌঁছননি বিকাশবাবু। সে কথাও তুলে দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘খুব ভাল হত, আজ যদি বিকাশবাবু এখানে থাকতেন। হয়তো তিনি আসতে পারবেন না।’’ তবে তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হন প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশবাবু। ততক্ষণে অবশ্য তৃণমূল বোর্ডের সাফল্যের খতিয়ান দিতে শুরু করেছেন আরেক মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। প্রতিপক্ষ বিকাশবাবুকে সামনে পেয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত বাম পুরবোর্ড শহরের জমি বিক্রি করে পুরসভা চালিয়েছে। আর আমরা সম্পত্তি করের আদায় বাড়িয়ে পুরসভার উন্নয়ন করেছি। এক জন্য নাগরিকদের উপর এক পয়সাও বাড়তি কর চাপেনি।’’ ফের ধাক্কা গত বামবোর্ডকে।

প্রতিপক্ষকে ছেড়ে কথা বললেন না বিকাশবাবুও। তৃণমূলের মেয়র পারিষদদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বললেন, ‘‘বিষয়টা দেখছি আমি বনাম ওঁরা।’’ জানালেন, এখানে যে একটা বিতর্ক হবে, তেমনটা জানা ছিল না। পরে অবশ্য বললেন, ‘‘নিজের পিঠ চুলকানোর ব্যাপার চলছে।’’ এর পরেই তিনিও নিজের আমলের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমার আমলেই নাগরিককে প্রাথমিক পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পরে সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ তৃণমূল বোর্ড। পথচারীদের রাস্তা সুরক্ষিত নেই। নেই হকারদের উপর নিয়ন্ত্রণও। ওঁরা বিশৃঙ্খলাকে উৎসাহ দিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রাস্তা দখল করে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ার বিরোধী ছিলাম আমরা। ওঁদের আমলে তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমনকী প্রাণীসম্পদ দফতরের স্টলও রাস্তা ঘিরে হচ্ছে।’’ ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের কথা তুলে বললেন, ‘‘শুধু বিদ্যুৎ বিলই নয়, ওই আলো শহরে কার্বনের পরিমাণও বাড়াচ্ছে।’’ তাঁর মতে, এঁদের আমলেই শহর জুড়ে ছেয়ে গিয়েছে দৃশ্যদূষণ বিজ্ঞাপন। এমনকী বিবাদি বাগে হেরিটেজ জোনে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিয়েও সরব হন প্রাক্তন মেয়র। টিপ্পনি কাটেন নীল-সাদা রঙ নিয়েও।

ফের জবাব দেওয়ার সুযোগ মিলতেই দেবব্রতবাবু বললেন, ‘‘শহরের ফুটপাথ ঘিরে ক’টা পার্টি অফিস করেছেন আপনারা, তার হিসেব রেখেছেন তো। মনে আছে অপারেশন সানশাইনের কথা। আমরা গত ৫ বছরে গার্ডেনরিচ করেছি। ধাপা প্রকল্প করেছি। সেই কারণেই ভোটে ফের মানুষ আমাদের সমর্থন করবে। দেখে নেবেন।’’ তা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিকাশবাবু। বলেন, ‘‘তথ্য বিকৃত করতে গিয়ে এমন জায়গায় পৌঁছেছেন, যা সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’ ধাপা প্রকল্পের অনেকটা বাম আমলে হয়েছে, বাকি যে কাজটা ছিল এক বছরের, তা করতে তৃণমূলের চার বছর লেগেছে। গার্ডেনরিচও বাম আমলের— দাবি বিকাশবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement