—প্রতীকী চিত্র।
শহর কলকাতায় কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক নেওয়ার পরিসংখ্যানে উদ্বেগ বাড়ছে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, কুকুর, বেড়ালের কামড়ের কারণে ২০২২ সালে বিভিন্ন পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক নিয়েছিলেন ৪১,৩৮৯ জন। চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা ২৫,২৯৯। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, বেড়ালের থেকে কুকুরের কামড়েই বেশি মানুষ প্রতিষেধক নিয়েছেন।
পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, কুকুরের কামড়ে রক্ত বেরোলে যে ইনজেকশন দেওয়া হয়, ২০২২ সালে সেটির গ্রহীতা ছিলেন ৫৯৪৫ জন। রক্ত বেরোয়নি, এমন ক্ষেত্রে অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিয়েছেন ৩৫,৪৪৪ জন। একই ভাবে চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত ওই ইনজেকশন নিয়েছেন ৩৯৪০ জন। এআরভি নিয়েছেন ২১,৩৫৯ জন।
কুকুরের কামড়ে যে হারে প্রতিষেধক ও ইনজেকশন নেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, তাতে চিন্তিত অনেকেই। অথচ, শহরে পথকুকুরের নির্বীজকরণ ও জলাতঙ্ক রোধে তাদের প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আর্থিক সহায়তায় পুরসভা প্রতিটি ওয়ার্ডে শিবির করে এই কর্মসূচি বছর দুয়েক আগে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, তার পরেও কেন কুকুরের কামড়ের শিকার হচ্ছেন মানুষ?
বিজেপির পুরপ্রতিনিধি মীনাদেবী পুরোহিত গত জুলাইয়ে পুর অধিবেশনে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ওয়ার্ডের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট, রাজাকাটরা, মহাত্মা গান্ধী রোড, দিগম্বর জৈন টেম্পল রোডে প্রায় রোজই মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হচ্ছেন। তখন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই পুরসভা শিবির করে পথকুকুরদের নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। মীনাদেবী বলেন, ‘‘দু’মাস আগে পুর অধিবেশনে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। এ ভাবে পথকুকুরদের নির্বীজকরণের নামে মোটা টাকার অপব্যবহার করা হচ্ছে।’’ পশুপ্রেমী দেবশ্রী রায়ের দাবি, ‘‘রাস্তার কুকুরকে বিরক্ত করলে তবেই সে মানুষকে কামড়ায়। বহু মানুষ অবোলা প্রাণীদের উপরে অত্যাচার করেন। তবে নির্বীজকরণ বা প্রতিষেধক প্রদানে পুরসভার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে পারব না।’’
ভারতের জলাতঙ্ক নিরোধক সংগঠনের সভাপতি, চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার মনে করেন, পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক প্রদানের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে জলাতঙ্কমুক্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। কুকুর কামড়ালেই দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কামড়ানোর স্থানটি ১৫ মিনিট ধরে সাবান-জলে ধুতে হবে। নিতে হবে ইনজেকশনও।’’
যদিও অতীনের দাবি, ‘‘এত মানুষকে কখনওই কুকুরে কামড়াতে পারে না। বছরে এত মানুষকে কুকুরে কামড়ালে আমি এই চেয়ারে থাকব না। হয়তো পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও পাস্তুর ক্লিনিক-সহ অন্য সরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যান যোগ করে এই সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।’’