যোধপুর গার্ডেন

বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র দেখিয়ে লুঠ

কলিং বেল শুনে বৃদ্ধা ভেবেছিলেন পরিচিত কেউ এসেছে। ‘আই হোল’ দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকদের চিনতে না পেরেও তাদের ডাকাডাকিতে লক খুলে দরজার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪২
Share:

ঘটনার পরে ওই আবাসনে প্রতিবেশীদের ভিড়। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

কলিং বেল শুনে বৃদ্ধা ভেবেছিলেন পরিচিত কেউ এসেছে। ‘আই হোল’ দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকদের চিনতে না পেরেও তাদের ডাকাডাকিতে লক খুলে দরজার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়েছিলেন তিনি। তখনই যুবকেরা হঠাৎ জোর করে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে যায়। পরে বৃদ্ধার মুখ চেপে, অস্ত্র দেখিয়ে আধ ঘণ্টা ধরে লুঠপাট চালিয়ে চম্পট দেয় ওই তিন যুবক।

Advertisement

শহরের বুকে ফের দুষ্কৃতীদের হাতে বৃদ্ধার আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনা ঘটেছে সোমবার দুপুরে লেক থানার যোধপুর গার্ডেনে। দুষ্কৃতীরা নগদ কয়েক হাজার টাকা এবং সোনার গয়না নিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃদ্ধার নাম বিমলা গুপ্ত (৭৮)। বছর দুয়েক আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ওই চারতলা আবাসনের একতলায় একাই থাকতেন বিমলাদেবী। বৃদ্ধার দুই ছেলের এক জন থাকেন যোধপুর পার্ক এবং অন্য জন থাকেন গড়িয়ায়।

পুলিশ জানায়, তিন দুষ্কৃতী লুঠপাট চালিয়ে চলে যাওয়ার পরেই বিমলাদেবী বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের ডাকেন। তাঁরাই বৃদ্ধার ছেলে অজয়কে খবর দেন। পরে তিনি পুলিশকে জানালে লেক থানা এবং লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা যান। নিয়ে আসা হয় স্নিফার ডগও। বিমলাদেবীর পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে পুলিশ।

Advertisement

মাসখানেক আগেই পার্ক স্ট্রিটের একটি আবাসনে এক বৃদ্ধার বাড়িতে হানা দিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী। পরে অবশ্য পুলিশ ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুপুর বারোটা নাগাদ পরিচারিকা কাজ সেরে যাওয়ার পরে একাই ছিলেন বিমলাদেবী। পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, সাড়ে বারোটা নাগাদ তিন যুবক কলিং বেল বাজায়। তিনি আই হোল দিয়ে দেখেন অচেনা তিন যুবক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলছে না দেখে ওই যুবকেরা বারবার কলিং বেল বাজাতে থাকায় ওই বৃদ্ধা দরজাটি একটু ফাঁক করে জানতে চান, কেন তারা এসেছে। পুলিশের দাবি, এর পরেই ওই তিন জন দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে। এর পরে বিমলাদেবীর মুখ চেপে ধরে ঘরের একটি চেয়ারে বসিয়ে দেন। পুলিশের কাছে ওই বৃদ্ধার বক্তব্য, দুষ্কৃতীরা তাঁকে অস্ত্র দেখিয়ে বলে, চিৎকার করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অবাধে লুঠপাট চালানোর পরে ওই তিন দুষ্কৃতী বৃদ্ধাকে হুমকি দিয়ে এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়। পুলিশের দাবি, যাওয়ার আগে ওই দুষ্কৃতীরা বৃদ্ধার মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, দুষ্কৃতীরা বিমলাদেবীর হাত বাঁধারও চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি অনুরোধ করেন হাত না বাঁধতে। সেই সঙ্গে নিজের হাতের গয়না সোনার নয় বলায় দুষ্কৃতীরা তা না নিয়েই চলে যায়। যাওয়ার আগে ওই দুষ্কৃতীরা এক জনকে ফোন করে গাড়ি তৈরি রাখতে বলে বলেও জানিয়েছেন বৃদ্ধা। যা শুনে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ছিল চার জন। যাদের মধ্যে এক জন বাইরে ছিল। তবে কোনও মোটরবাইক না গাড়ি নিয়ে দুষ্কৃতীরা ওই এলাকায় এসেছিল, তা পরিষ্কার নয় গোয়েন্দাদের কাছে।

প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই দুষ্কৃতীরা এলাকায় পরিচিত। ফলে বিমলাদেবী যে ওই সময়ে একা থাকতেন, তা জানত দুষ্কৃতীরা। এ ছাড়া যে এলাকায় ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ। এলাকা সম্পর্কে জ্ঞান থাকাতেই ওই দুষ্কৃতীদের ডাকাতি করে পালাতে সুবিধে হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধার ঘরে রয়েছেন বড় ছেলে অজয়বাবু ও তাঁর স্ত্রী। পরে যান কলকাতা পুলিশের একাধিক গোয়েন্দাকর্তা। বিকেলেই দুষ্কৃতীদের ছবি আঁকাতে ওই বৃদ্ধাকে লালবাজারে নিয়ে যান গোয়েন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement