—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
থিম এবং পুরস্কারের যুগে পাল্টে গিয়েছে সপ্তমীর সকাল। বৃহস্পতিবার সাত-সকালে নবপত্রিকা স্নানের সময়েই কলকাতার নামী পুজোর মণ্ডপে বড় প্রতিযোগিতার ফল নিয়ে উদ্বেগ। সুখবর আসতেই সকাল ন’টা নাগাদ উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যয়ে আবির খেলা শুরু হয়ে গেল। সল্টলেকের একে ব্লকের পুজোর অন্যতম প্রাণ, নারায়ণ এবং মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় তখন আনন্দাশ্রু সামলাতে পারছেন না। মৌসুমি বললেন, ‘‘এই প্রথম পুজোর বড় পুরস্কার ঢুকছে সল্টলেকে। এর জন্য আমরা কত বছর অপেক্ষায় ছিলাম।’’
একটি বছরের পুজো শেষ হতেই পরের বারের শিল্পী ধরতে নেমে পড়া এ যুগের পুজোর দস্তুর। সপ্তমীর সকালে সেই কর্মকর্তাদের অনেকেরই শরীর ছেড়ে দেয়। তা বলে নামী, দামী মণ্ডপ দেখতে জনজোয়ারের সামনে বিশ্রামের অবকাশ কই! সামান্য বেলা গড়াতেই কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে জনতার ঢল নামতে শুরু করে। নিউ আলিপুরের প্রভাবশালী কর্মকর্তার পুজোর কপালে এ বার তেমন বড় পুজো জোটেনি। তাতে সামান্য ক্ষোভের আবহ। তবে কর্মকর্তারা এক সুর, আসল পুরস্কার মানুষের ভিড়ে। বাগুইআটির অর্জুনপুর আমরা সবাইয়ের মণ্ডপে ঠাকুর দেখার অভিজ্ঞতাই ইদানীং পাল্টে দিচ্ছেন ভবতোষ সুতার। ভবতোষ কর্মকর্তাদের দেখতে বললেন, প্রতিযোগিতার বিচার শেষ হলেও সন্ধ্যায় প্রতিমার চারপাশে ভারতের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে নাট্য উপস্থাপনায় যেন কোনও ছন্দপতন না-হয়।
দুপুরে কলকাতার আকাশের মুখ ভার হলেও পুজো আবেগে তাল কাটেনি। রাজ্য জুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এ দিন ঠাকুরদেখা চলে। এ বার সপ্তমীর সকালেই কিছু ক্ষণের মধ্যে অষ্টমীর তিথি পড়েছে। উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গে সপ্তমীতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে অষ্টমীর অঞ্জলিও শুরু হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে অঞ্জলি দেওয়ার ভিড় ছিল জলপাইগুড়ির যোগমায়া কালীবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে। বছরভর শহরের নানা প্রান্তে ছিটকে থাকা আত্মীয়, বন্ধুরা অনেকেই এ দিনই অঞ্জলি দিতে উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে হাজির। পুজোর ছয় দশকের পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমরা অষ্টমীর পুজো নানা আচার মেনে খুবই বিস্তারে সেরে থাকি। কিন্তু অষ্টমীর সূর্যোদয়ের পরে এ বার সময় খুব কম পাব। তাই বৃহস্পতিবারই চার, পাঁচ ব্যাচ অঞ্জলি পড়িয়েছি। কুমারীপুজোর অনুষ্ঠানও আজই সেরে ফেললাম। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুধু শেষ ব্যাচের অঞ্জলি সারা হবে। এর পরই আমরা সন্ধিপুজোর অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করব।’’
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় শিলিগুড়িতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়েছিল, তাই সপ্তমীর দুপুর থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়েছেন। সন্ধ্যার পরে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড, সেবক রোড-সহ নানা এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণে বেগ পায় পুলিশ। সপ্তমীর দুপুরের পরে দর্শনার্থীদের গন্তব্য হয়ে ওঠে বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি। বিকেলের পর থেকে বড় বাজেটের মণ্ডপে ভিড়। কোচবিহারের রাস্তাতেও নেতাজি স্কোয়ার, নাট্য সঙ্ঘ, পাতাকুড়া ক্লাবের পুজো মন্ডপে ভিড় উপচে পড়েছিল। দিনহাটা, আলিপুরদুয়ারে ভিড় ভিড় উপচে পড়েছে। মালদহে সন্ধ্যার আকাশে বিদ্যুতের ঝলক থাকলেও মণ্ডপগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। রায়গঞ্জে সকালে তেমন ভিড় ছিল না। তবে সন্ধের পরে বড় বাজেটের মণ্ডপগুলিতে ভিড় বাড়তে শুরু করে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এ দিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যায় বালুরঘাটে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেই চলে ঠাকুর দেখা।
মেদিনীপুর শহরের মণ্ডপগুলিতে সন্ধের পরে ভিড় বাড়ে। ঝাড়গ্রাম শহরেও ভিড় ছিল বিকেল থেকে। খড়্গপুর, ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, গড়বেতা, দাঁতন, বেলদা— সর্বত্র সপ্তমীতে ছিল জনজোয়ার। সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। মোটরবাইক, টোটোর দাপাদাপিতে যানজট হয় কলেজ মোড়, মাচানতলা ও লালবাজার মোড়ে। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের বড় বাজেটের পুজোও ভিড় টানে। নিতুড়িয়ায় বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান পাওয়া তিনটি পুজো দেখতে উন্মাদনা তুঙ্গে। রেলশহর আদ্রা, পুরুলিয়া শহরের বড় পুজোগুলিতেও ভিড় ছিল।
সন্ধ্যা নামতেই বহরমপুর, কান্দি-সহ মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন মণ্ডপেও ভিড়ের ঢল নামে। রাত ৮টায় বহরমপুরের লোয়ার কাদাইয়ের পুজোয় কয়েক হাজার দর্শনার্থীর লাইন। পূর্ব বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল শহরের বিভিন্ন মণ্ডপেও এক ছবি। দুর্গাপুরের মার্কনী, নবারুণ, ফুলঝোড়, চিত্তরঞ্জন, চতুরঙ্গের মতো বড় মণ্ডপে চোখেপড়ার মতো ভিড় ছিল। সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারেও ঠাকুর দেখার ভিড়। ক্যানিংয়ের মিঠাখালি, রাজারলাট পাড়া, বিদ্যাধরী পাড়া এলাকাতেও মানুষের ঢল। ভিড় বেড়েছে জয়নগর, কুলতলির মণ্ডপেও। বনগাঁ শহরে ভিড়ের যান নিয়ন্ত্রণে একাধিক ‘ড্রপ গেট’ করা হয় পুলিশের তরফে। বসিরহাট শহরেঅবশ্য সন্ধ্যায় ভিড় জমেনি। বিকেলে বৃষ্টি হলেও, হাবড়া, অশোকনগর গোবরডাঙা, বারাসত পথে নেমেছে। একই ছবি গ্রামীণ হাওড়ায়। হুগলির শ্রীরামপুরে রাত বাড়তেইমানুষের ঢল।
রাতে প্রবল ভিড়ে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো পুলিশ বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ।। পুজো কর্তা সজল ঘোষ এ সবই পুলিশের চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন।